শিশু শিক্ষায় মাতৃভাষা ও এর কার্যকরী ব্যবহার
কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: শিশুশিক্ষার জন্য সবচেয়ে সঙ্গত, স্বাভাবিক ও কার্যকরী মাধ্যম হলো স্ব-স্ব মাতৃভাষা। এই সত্য শিশুর ভাষাশিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই, এদেশের সত্তর/আশি ভাগ বাঙালি শিশু গ্রামে বাস করে এবং তাদের ভাষামাধ্যম বাংলা। বাকি ত্রিশ/বিশ ভাগ বাঙালি শিশু রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বাস করে। এদের ভাষামাধ্যমও বাংলা কিন্তু এদের অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ভুল দৃষ্টিভঙ্গির ফলে এসব শিশুদের ভাষাশিক্ষা যথার্থ পথে বিকশিত হচ্ছে না।
শহুরে বাঙালি উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ভেতর শিক্ষামাধ্যম হিসেবে বাংলাকে বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষার প্রতি আসক্তি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। মনে রাখতে হবে, ইংরেজি ভাষা শুধু নয়, অন্য একাধিক যেকোনো ভাষায় শিশুর দক্ষতা অর্জন অবশ্যই প্রশংসনীয়, তবে কোনো অবস্থাতেই তার মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে নয়।
শিক্ষার শুরুতেই শিশুর ভাষামাধ্যম সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বাবা-মা বা অভিভাবকদের। কেননা, পরিবারের মাধ্যমেই শিশুশিক্ষার সূচনা ঘটে। শিশুর ভাষাশিক্ষা আয়ত্তিকরণ বিষয়ে গবেষকদের মত হলো, অনুকরণের মাধ্যমে শিশুরা ভাষাকে ধাপে-ধাপে রপ্ত করে থাকে। এ কারণে পরিবারের ভেতর বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজনেরা কীভাবে ও কী ভাষায় কথা বলছেন, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকেই শিশুরা আয়ত্ত করে ভাষা ও বাচনিক ভঙ্গি।
আবারো বলছি, আজকের দিনে বিশ্ব-যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রয়োজনে ইংরেজি ভাষাশিক্ষার গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। এই বাস্তবতায় যে কেউই ইংরেজি ভাষা আয়ত্ত করতে পারেন। কেবল ইংরেজি কেন, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বিশ্বের আরো বহু ভাষা আয়ত্তীকরণেও বাধা নেই।
কিন্তু শিশুশিক্ষার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন মাতৃভাষা। বাঙালি শিশুর ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার গাঁথুনি মজবুত হলে অন্যান্য ভাষাশিক্ষা গ্রহণও সহায়ক হবে। শিশুরাই আলোকোজ্জ্বল আগামীর নির্মাতা। আগামীতে কেমন হবে আমাদের প্রিয়তম দেশ— তা নির্ধারণ করবে আজকের শিশুরাই। তাই সবার আগে প্রয়োজন এই শিশুদের যথার্থ বিকাশ, প্রকৃত শিক্ষার পথ-নির্মাণ। আমাদের সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও যার-যার অবস্থান থেকে সচেতন সুদৃষ্টিই পারে মাতৃভাষায় শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য বয়ে আনতে।