উখিয়া-টেকনাফে চার হাজার ৮০২ রোহিঙ্গা এতিম শিশু

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এতিম শিশুর সংখ্যা চার হাজার ৮০২। এদের কারও মা, কারও বাবা আবার কারও মা-বাবা দুজনই নেই। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর এই শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। জরিপ করে তালিকা তৈরির পর তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে এই শিশুদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাগুলো পাওয়া নিশ্চিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা হলেও সরকারি নির্দেশে এখন তা বাদ দেওয়া হয়েছে। পরে এ কার্যক্রমের নামকরণ করা হয় ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড’। শিশু আইন অনুযায়ী ১৮ বছর পর্যন্ত বয়সীদের শিশু হিসেবে গণনা করা হচ্ছে বলে জানান কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার জেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা ও ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড’কার্যক্রমের সুপারভাইজার মো. এমরান খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যেসব শিশু বাবা-মা হারিয়ে এখানে এসেছে তাদের নিয়ে কাজ করছি।’
কক্সবাজার জেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ২০ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে চার হাজার ৮০২টি এতিম শিশুকে পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ডাটা এন্ট্রি করা হয়েছে এক হাজার ৪১২ জনের।’
এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজারে গেছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাজ্জাদুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের খুঁজে পাওয়া চার হাজার ৮০২টি এতিম শিশুর মধ্যে ডাটা এন্ট্রি করা হয়েছে এক হাজার ৪১২ জনের। এর মধ্যে এক হাজার ১৬৪টি শিশুর সব তথ্য ভেরিফিকেশন করা হয়েছে।’

তিনি জানান, এই শিশুদের কয়েক ভাগে ভাগ কার হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ২৭ ভাগ শিশুর বাবা-মা কেউই নেই। বাবা নেই ৫৭ শতাংশের। আবার বাবা বা মা বেঁচে আছেন কিনা সেটা বলতে পারে না শতকরা ৩ ভাগ শিশু। এই শিশুরা রয়েছে তাদের আত্মীয়দের কাছে। আবার বাবা-মা থেকে বিচ্ছিন্ন বা অপরিচিতদের কাছে রয়েছে পাঁচটি শিশু। রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার সময় রাস্তায় বা নদীতে নৌকায় পেয়ে এই শিশুদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।
সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনও প্ল্যানিং পর্যায়ে রয়েছি। এই শিশুদের কিভাবে ট্রিট করা হবে সেসব বিষয়ে এখন কাজ হচ্ছে। তাদেরকে নিজেদের সোসাইটির মধ্যে রেখেই কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সে বিষয়টিই ভাবতে হচ্ছে আমাদের। কারণ তারা যেহেতু এক সময় নিজ দেশে ফেরত যাবে, সেক্ষেত্রে নিজেদের সমাজের লোকদের কাছে থাকলেই তাদের ভালো হবে।
এ ভাবনা থেকেই রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের সোসাইটিতে রাখার চিন্তা করছি। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পরই কেবল এ বিষয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারবো।’ তবে লাস্ট রিসোর্ট হিসেবে আমরা তাদের জন্য টেকনাফ ও উখিয়ায় সরকারের কাছে ২০০ একর জমিও চেয়েছি। এটা একেবারেই শেষ মুহুর্তে করা হবে।
কিভাবে এ কর্মসূচি পরিচালনা করছেন জানতে চাইলে ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড’কার্যক্রমের সুপারভাইজার মো. এমরান খান বলেন, ‘প্রথমে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি সেই শিশুদের, যারা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে। এরপর রয়েছে যেসব শিশু বাবা হারিয়েছে তাদের।’ মা-বাবা হারানো শিশুদের এক জায়গায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই শিশুদের মধ্যে যেসব বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়ে আছে, তাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

<

p style=”text-align: justify;”>এমরান খান আরও বলেন, ‘১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের এক জায়গায় রাখা হবে এবং বাকিদের এভাবে গ্রেডিং করা হবে। রয়েছে প্রতিবন্ধী শিশুও- তাদের পৃথক রাখা হবে। ফরমাল এডুকেশনের মধ্যে এসব শিশুকে নিয়ে আসারও পরিকল্পনা রয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *