কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: জাতিসংঘ শিশুবিষয়ক তহবিল (ইউনিসেফ) বলেছে, মিয়ানমারে সহিংসতা বা ক্ষুধার কারণে প্রতি সপ্তাহে ১২ হাজারের মতো শিশু পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা এখন প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার। তারা শিবিরের নোংরা পরিবেশে বাস করছে এবং পর্যাপ্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।
শুক্রবার ইউনিসেফ ‘গৃহহীন ও মরিয়া: রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিশুরা বিপজ্জনক ভবিষ্যতের মুখে’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, এসব শিশু নিজের চোখে দেখা নৃশংসতায় এখনো ভীতসন্ত্রস্ত।
ইউনিসেফ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা শিশুদের মানবিক সহায়তা দিতে ইউনিসেফকে অবিলম্বে রাখাইনে প্রবেশের অধিকার দিতে হবে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, অবিলম্বে এসব শিশুর জন্য খাবার, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ করতে টিকা দরকার। তাদের শিক্ষা, কাউন্সেলিং প্রয়োজন।
জাতিসংঘ বলেছে, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নির্মূল’ অভিযান শুরু করে। এতে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ শিশু আসছে। রোহিঙ্গা শিশুরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তাদের বেশির ভাগ উদ্বাস্তু শিবিরের ঘিঞ্জি এবং অস্বাস্থ্যকর ছাপড়া ঘরে থাকছে। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ব্যাপক সহায়তা কার্যক্রম সত্ত্বেও অনেক শিশুর প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না।
ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা এখনো আসছে। শিশুদের জন্য ভয়ংকর বিপদগুলো আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। খোলা আকাশের নিচে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার, নিরাপদ পানি ও পয়োব্যবস্থা অপ্রতুল। তাদের পানিবাহিত ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দেখা যাচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ রোহিঙ্গা শিশুর হামের মতো রোগগুলো প্রতিরোধের টিকা দেওয়া হয়নি। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে শিশুরা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। সেখানে মায়েদের প্রসবোত্তর ও নবজাতকদের জন্য সেবা অপর্যাপ্ত। সহিংসতা দেখা আতঙ্কগ্রস্ত শিশুদের জন্য সহায়তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। শিবিরগুলোর অবস্থার কারণে তরুণ ও শিশুরা মানব পাচারের শিকার হতে পারে। কেউ কেউ তাদের শোষণ এবং নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাখাইন সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। রাখাইন রাজ্য-সম্পর্কিত অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশের আলোকে রোহিঙ্গাদের বৈষম্যের সমাধান করতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২৩ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক প্লেজিং কনফারেন্স’ সামনে রেখে ইউনিসেফ অর্থ সহায়তা দিতে দাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলোর করা হালনাগাদ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি ও আগে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সব চাহিদা পূরণের ৪৩ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার লাগবে।