কী করে বুঝবেন শিশু অটিজম আক্রান্ত কিনা?

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: বিশ্বজুড়ে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। মস্তিষ্কের বিকাশজনিত জটিল এ রোগে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের শিশুরাই কম বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে পৃথিবীতে ১০ মিলিয়নেরও বেশি শিশু অটিজম আক্রান্ত। গেল কয়েক বছরে এর বিস্তার আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশেও এরকম অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা একেবারে কম নয়। এ রোগে আক্রান্ত যেকোনও শিশু কখনোই পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায় না। তবে বাবা-মা, পরিবার ও চারপাশের মানুষদের সমর্থন ও সেবা পেলে একটি অটিস্টিক শিশুও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে। নিজের জীবনকে নিজেই পরিচালিত করতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, অটিজম আক্রান্ত শিশুদের আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গি দেখলেই বোঝা যায়। এদের স্বাভাবিক আচরণে সমস্যা হয়, কথার মাধ্যমে ভাব প্রকাশে অক্ষমতা এবং একই কথা কিংবা ভাব প্রকাশের পুনরাবৃত্তির প্রবণতা থাকে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২-৩ বছর বয়সী শিশুরাই অটিজমে আক্রান্ত হয়। তবে শুরুতেই রোগ শনাক্ত করা গেলে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে তা অনেকাংশেই সমাধান হয়ে যায়।
মনে রাখতে হবে, কোনও সুনির্দিষ্ট কারণে অটিজমে আক্রান্ত হয় না। কিছু বিরল জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশনের কারণে অটিজম হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের বিকাশকালীন সময় জিনগত ও পরিবেশগত উপাদানের প্রভাবে অটিজম হয়ে থাকে। গর্ভধারণ এর সময় পিতা-মাতার অধিক বয়স, গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের অসুস্থতা, স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই ভূমিষ্ট হওয়া, স্বাভাবিকের চাইতে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া, প্রসবকালীন জটিলতা যেমন জন্মের সময় শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কম পাওয়া প্রভৃতি কারণও অটিজমের জন্য দায়ী।
শিশুর অটিজম আছে কিনা সেটা কিভাবে শনাক্ত করবেন? সাধারণত শিশুর বয়স ২ বছরের কম হলে সুনিশ্চিতভাবে অটিজম নির্ণয় করা যায় না। তবে বাবা-মা ও অভিভাবকদের কিছু লক্ষণ নজরে রাখতে হবে। যেমন-
শিশুর বয়স ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও যদি সে স্বাভাবিকভাবে  না হাসে, বয়স ৯ মাস হওয়ার পরও যদি সে অন্যের সঙ্গে কথা, শব্দ, হাসি ও মুখের ভাবভঙ্গির সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ না করে, এক বছর বয়সের মধ্যে যদি মুখে কোনও শব্দ না করে, শুধু আঙুল দিয়ে কোনও কিছু না দেখায় কিংবা হাত দিয়ে কোনও কিছুকে শক্ত করে না ধরে তবে বুঝতে হবে শিশুটির অটিজম আছে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হবে পরিবারের সদস্যদেরই। শিশুর জন্মের পর খেয়াল রাখতে হবে তার বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক শিশুদের মতোই সে সবকিছু করতে পারছে কি না। কোনও সমস্যা মনে হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই উত্তম।