কিশোর অপরাধ রোধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন

কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ সারাদেশে ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে কিশোর অপরাধের ঘটনা। স্কুলের গণ্ডি পেরুনোর আগেই অনেকে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে, যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট অপরাধী চক্রেও। কম বয়সেই ঘটাচ্ছে ভয়ঙ্কর নানা অপরাধ। দেশের বিভিন্ন স্থানে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক গ্রুপিং, প্রেম, মুঠোফোন আসক্তি ও প্রতিহিংসার কারণে হামলা, নির্যাতন, হত্যা, অপহরণ, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করছে এসব কিশোররা। এসবের বাইরেও ইভটিজিং কিংবা মহল্লাভিত্তিক বখাটে গ্রুপ তৈরি করে পরিকল্পিত হত্যা এবং সহপাঠীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে তারা। কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর সারাদেশে কিশোর অপরাধের মতো ঘটনায় প্রায় পাঁচ শতাধিক মামলা দায়ের হচ্ছে। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত এবং শিশু আদালতের বিচারিক নিবন্ধন খাতার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে সব মিলিয়ে ঢাকায় ৯৯ খুনের মামলায় তিন শর বেশি কিশোর জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে গত দেড় বছরেই ঘটেছে ১৩টি খুন। এতে জড়িত অন্তত ১২০ কিশোর। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কিশোর অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ। সমাজ যেমন বিভিন্ন দিক থেকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সামগ্রিকভাবে একটি মানসিক-সামাজিক অধঃপতন ও অবক্ষয়ের মধ্য দিয়েও অগ্রসর হচ্ছে। পরিবার-শিক্ষা-রাজনীতি-আদর্শ সব জায়গাতেই এর কালো ছায়া আছে। সবাই যখন অর্থবিত্তের দিকে ঝুঁকে পড়ে তখন এর আড়াল দিয়ে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বড় হয়ে ওঠে। যার অন্যতম বলি হচ্ছে শিশুরা।

দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পাশাপাশি পারিবারিক গণ্ডিতে সঠিক শিক্ষার অভাব অনেকাংশে কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের অপরাধ জগতে টানছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। ফলে একসময় এই কিশোররা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এসব কিশোর অপরাধীরাই এক সময় বড় অপরাধী হয়ে উঠে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলে। পরিবার, সমাজ ও সরকার প্রত্যেকেরই উচিত নিজের অবস্থান থেকে যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে এ প্রবণতা ঠেকানো, তা না হলে অপরাধপ্রবণ তরুণ সমাজ দেশের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠবে।
পুলিশ বা বিচারক, বিধান বা উপদেশ, আইন বা ধমক, জেল বা বেতের বাড়ি বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারে না। কিশোরদের অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হলে এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে নীতি নৈতিকতার চর্চা বাড়াতে হবে। নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করতে হবে।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত শিশুকে সময় ও সঙ্গ দেয়া, বয়ঃসন্ধিকালে তাদের চলাফেরা, সঙ্গীদল, আচরণ, কথাবার্তার দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া। স্কুলে তাদের আনন্দময় সৃজনশীল চর্চার অবকাশ দিতে হবে। সমবয়সীদের সঙ্গে সুস্থ বিনোদন, নির্মল আনন্দ ও সৃজনশীল দলীয় কাজে উৎসাহ দিতে হবে। সরকারকে পরীক্ষামুখী মুখস্থ বিদ্যার শিক্ষা থেকে সরে এসে সত্যিকারের পঠনপাঠনের জগৎ খুলে দেয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কিশোরদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যে সামাজিক ও পারিবারিক অনুশাসন দরকার, তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে।