কিশোরবাংলাপ্রতিবেদন: ম্যাক্স নামের বুড়ো কুকুরটি ১৬ ঘণ্টা পাহারা দিয়ে রাখে হারিয়ে যাওয়া শিশুটিকে। বাসা থেকে তার বেরিয়ে যাওয়া কেউ লক্ষ না করলেও পোষা কুকুরটি ঠিকই খেয়াল করেছিল। তাই তো শিশুটির পেছন পেছন সে হাঁটতে থাকে। এভাবে ১৬ ঘণ্টা শিশুটিকে দেখে রেখেছিল কুকুরটি। বাড়ির লোকজন আর পুলিশ খোঁজাখুঁজি শুরু করলে কুকুর তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় শিশুটির কাছে।
ঘটনাটি ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে। গত শনিবার সকাল আটটায় পাহাড়ি এলাকা থেকে মেয়েশিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
১৭ বছর ধরে শিশুটির পরিবারের সঙ্গে রয়েছে ম্যাক্স নামের কুকুরটি। আরোরা নামে তিন বছর বয়সী শিশুটি সবার অলক্ষ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের ভেতর চলে যায়। তার পেছন পেছন যায় ম্যাক্সও। একসময় রাত নেমে আসে। আরোরাকে পাহারা দিতে সেখানেই রয়ে যায় ম্যাক্স। বুড়ো ম্যাক্স কানে শোনে না। চোখেও স্পষ্ট দেখে না। বাসার লোকজন হন্যে খুঁজতে থাকে আরোরাকে। খবর দেয় পুলিশকে।
আরোরার নানি লেইসা ম্যারি বেনেট অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমকে বলেন, আরোরাকে যেখানে পাওয়া গেছে, তা বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে পৌঁছে তিনি আরোরার কান্না শুনতে পান। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের ওপরে উঠে আসার পর কুকুরটি আমার কাছে ছুটে আসে এবং সোজা আরোরার কাছে নিয়ে যায়।’ নাতনিকে পেয়ে আনন্দে চিৎকার করে কাঁদছিলেন তিনি। বললেন, আরোরার খুবই প্রিয় এই কুকুর। তারা দুজন সারাক্ষণই একসঙ্গে থাকে। এমনকি আরোরা ঘুমায়ও প্রিয় কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে।
আরোরার স্বজনেরা জানিয়েছেন, একটি পাহাড়ের নিচে আরোরা কুকুরটির সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল। তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সামান্য কেটে যাওয়া ছাড়া আরোরার আর কোনো ক্ষতি হয়নি।
এদিকে শিশুটিকে খুঁজে বের করতে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় জরুরি সেবার (এসইএস) কর্মী, পুলিশ ও সাধারণ লোকজনসহ শতাধিক মানুষ অভিযানে নামেন।
পুলিশ বুড়ো কুকুর ম্যাক্সের ভূমিকার প্রশংসা করে তাকে ‘পুলিশ কুকুর’ উপাধি দিয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক ক্রেইগ বেরি বলেন, শিশুটির বয়স মাত্র তিন বছর। বোঝাই যাচ্ছে, ওইটুকুন একটি শিশু রাতে একা ভয় পেয়েছে। ঠান্ডায় কষ্ট করেছে। কুকুরটি শিশুটিকে সঙ্গ দিয়েছে, উষ্ণ রেখেছে। এটা অনেক বড় বিষয়।
এভাবে সার্বক্ষণিক শিশুটির পাশে কুকুরটির থাকার বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব সিডনির পশু আচরণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পল ক্রিভে বিবিসিকে বলেছেন, বয়স্ক কুকুর সাধারণত মানুষের সংস্পর্শের মূল্য দেয়। এই কারণেই সে শিশুটিকে ছেড়ে যায়নি। সে শিশুটির কষ্ট বুঝতে পারছিল।
অধ্যাপক পল আরও বলেন, শিশুটি যদি ওই সময় কেঁদে থাকে, তাহলে কুকুরটি যেকোনো উপায়ে হোক মেয়েটিকে শান্ত করার চেষ্টা করে থাকবে। সারাক্ষণ শিশুটির পাশে থেকে সেই চেষ্টাই করেছে কুকুরটি।