সর্বনাশা মাদকের ছোবলে ৮৫ ভাগ পথশিশু
কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : সর্বনাশা মাদকের ছোবলে দেশের ৮৫ ভাগ পথশিশু। মাদকাসক্ত এসব পথশিশুরা অকালে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। হতাশা আর ক্ষোভ থেকে এসব শিশু মাদকে আসক্ত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে।
তারা সাধারণত গাঁজা, হেরোইন, ঘুমের ওষুধ, ডান্ডি, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে এবং পেট্রল শুঁকে নেশা করে। বিভিন্ন প্রকারের মাদক পাচার ও বিক্রির সাথেও জড়িত হয়ে পড়েছে।
মাদকাসক্ত ৮৫ শতাংশ পথশিশু মাত্র সাত বছরের মধ্যে অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।
এ পথশিশুদের না আছে ভাত, না আছে পাত। ট্রেন, বাস ও লঞ্চে বিনা টিকিটে ভ্রমণ এখান থেকে সেখানে। যেখানে রাত সেখানেই কাত। অবুঝ শিশুদের গ্রাস করছে মাদক। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই কোন না কোন মাদকে আসক্ত।
এরমধ্যে ধূমপান করে ৪৪ শতাংশ শিশু, বিভিন্ন ট্যাবলেট সেবন করে ২৮ শতাংশ শিশু, হেরোইন সেবন করে ১৯ শতাংশ শিশু, ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে ৮ শতাংশ শিশু।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পট রয়েছে যেখানে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। অভাব আর স্বভাব দুয়ে মিলে তাদের কাছে জীবন মানেই যেনো যন্ত্রণা।
দরিদ্র ও সামাজিক অবক্ষয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা, মাদকের আস্তানা দিন দিন পথশিশুদের নিয়ে যাচ্ছে মৃত্যুর দিকে। খাবার না খেলে তাদের চলে, কিন্তু নেশা না করলে তাদের চলে না। ঘুম হয় না, বুক জ্বলে।
এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অভাব ও বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পথশিশুদের ব্যবহার করে।
মাদক ব্যবসায়ীরা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ছলে বলে কৌশলে এদের মাদকের নেশায় আসক্ত করে। ফলে সহজেই আসক্ত হয়ে পড়েছে কোমলমতি পথশিশুরা।
অধিক মুনাফালোভী এক শ্রেণীর ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী স্কুল পড়ুয়া শিশুদের টোকাই বানিয়ে ফেলছে কৌশলে। টাকার লোভ দেখিয়ে ওদের কাজে পাঠানো হচ্ছে। মাদকসেবী পথশিশুরা ধীরে ধীরে অপরাধী, সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে উঠছে।
দারিদ্রতা এবং ভাগ্যের ফেরে অনেক পথ শিশুই আছে যাদের খোঁজ আমরা আজও জানিনা। হয়ত কোনো দিন জানতেও পারবো না। লোক চক্ষুর আড়ালেই রয়ে যাবে সব।
শিশুরাই আগামীদিনের ভবিষ্যত। কিন্তু ভবিষ্যতের যদি এই হাল হয় তবে সমাজ তথা দেশ কোন দিকে এগুচ্ছে? একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করব আমরা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমুঠো খাবার এর অভাবে হত দরিদ্র শিশুদের আজ এই অবস্থা।
আমাদের সকলেরই উচিত এই পথ শিশুদের পাশে এসে দাড়নো। যাতে নতুন করে আর কোনো শিশুর এই অবস্থা না হয়।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানী বলেন, পথশিশুরা মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেরাই এতে জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্তের কারণে এসব শিশু মানসিক ও শারিরীকভাবে যেমন দুর্বল, তেমনি হয়ে ওঠে হিংস্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, নানা কারণেই পরিবার থেকে বিচ্যুত হচ্ছে এসব শিশু। তাদের জন্য কাউন্সিলিং করা জরুরি।
আর মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি মনে করেন, এসব শিশুর জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ দরকার।