শিশু-কিশোরদের প্রতি কেন এই নিষ্ঠুরতা?

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : বেত্রাঘাত, ধর্ষণ ও হত্যার মতো নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে দেশে হরহামেশাই অমানবিক পর্যায়ে অপরাধের ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিন্তু শিশু-কিশোরদের প্রতি কেন এই নিষ্ঠুরতা? কেন এই অপরাধের মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এর জবাব খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরিসংখ্যানে ভয়াল চিত্র ফুটে উঠেছে।
সম্প্রতি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের চর শ্রীরামপুর গ্রামে সম্প্রতি সাগর নামের ১৬ বছরের এক কিশোরকে চুরির অভিযোগে দলবদ্ধভাবে পিটিয়ে হত্যা করার যে বিবরণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা রোমহর্ষক। যদিও শিশু-কিশোর হত্যার এমন নৃশংস ঘটনা এটাই প্রথম নয়, তবু যখন এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটে তখন ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ জনপ্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। নিষ্ঠুরতা-নির্মমতার বিরুদ্ধে এই জনপ্রতিবাদ এই সমাজের একটা ইতিবাচক দিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যখন এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড একের পর এক ঘটতে থাকে তখন গভীর প্রশ্ন জাগে, এই নিষ্ঠুরতার কি শেষ নেই? এমন সংশয়ও জাগে যে শিশু-কিশোরদের প্রতি এ ধরনের দলবদ্ধ নিষ্ঠুরতা কোনো মানসিক বিকারের লক্ষণ কি না।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিন বছরে মোট ১ হাজার ৮৫টি শিশু হত্যার শিকার হয়। আর মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নামের এক বেসরকারি সংস্থার ২০১৬ সালের শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর ২১৪টি শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩০৪টি, তাদের মধ্যে ২২টি শিশু মারা গেছে। শিশুদের ধর্ষণ করে খুন করার মতো বিকৃত নৃশংসতার ঘটনাও এ দেশে বিরল নয়। পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে শত্রুতার বলি হয় নিরীহ শিশুরা; শত্রুর শিশুকে হত্যা করে পুঁতে রাখা হয়। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে শিশু হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়।
বেশ কয়েকটি রোমহর্ষক শিশু হত্যার ঘটনায় আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার করা হয়েছে, খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশও হয়েছে। কিন্তু শিশু-কিশোর হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। এর কারণ কি এই যে শিশু হত্যা যত বেশি ঘটছে, সে তুলনায় বিচার ও শাস্তির দৃষ্টান্ত অনেক কম? তুলনামূলক বিচারে এখন পর্যন্ত সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের মতো শিশু-কিশোর হত্যার ক্ষেত্রেও হত্যাকারীরা নানা রকমের প্রভাব খাটিয়ে শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব এ ক্ষেত্রেও যথেষ্ট রয়েছে।
সাগর হত্যার পর যে মামলা হয়েছে, তাতে নাম-পরিচয়সহ আসামির সংখ্যা ছয়, অজ্ঞাতপরিচয় ছয় থেকে সাত। তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। শিশু হত্যার প্রতিটি ঘটনায় অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার সম্পন্ন করে দণ্ড কার্যকর নিশ্চিত করা প্রয়োজন। শিশু-কিশোরদের প্রতি নিষ্ঠুরতার লাগাম টেনে ধরার এটাই প্রধান পন্থা। এ ছাড়া সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তোলা জরুরি। ব্যক্তি ও সমাজের মনোজগৎ নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, সেসব গবেষক ও বিশেষজ্ঞ এদিকটিতে নজর দেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *