কিশোরবাংলাপ্রতিবেদন: সঠিক মনিটরিং না করা, সঠিক সময়ে শিক্ষকদের আগমন ও প্রস্থান না করায় গাংনীতে প্রাথমিক শিক্ষায় দেখা দিয়েছে বেহাল অবস্থা। অনেক শিক্ষকই তাদের সন্তানকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক পরিচালিত কেজি স্কুলে ভর্তি করছেন।
সেই সঙ্গে শিক্ষকদের নিয়মানুযায়ী বদলী না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস।
জানা গেছে, এ উপজেলায় ১৬২টি সরকারী ও ২টি বেসরকারী রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬টি ক্লাস্টার অফিস রয়েছে। এসব বিদ্যালয় মনিটরিংয়ের জন্য রয়েছে মাত্র ৫ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে বিভিন্ন বিদ্যালয় মনিটরিং করতে হয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয় খোলা থাকার সরকারী নিয়ম থাকলেও সিংহভাগ শিক্ষকই তা করেন না। আবার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঠদান করান না।
গত ১০ এপ্রিল রাজারপাড়া হেমায়েতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল পৌনে ১০টার সময় তিনজন শিক্ষক উপস্থিত। প্রধান শিক্ষকসহ বাঁকি ৩ শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাননি। কোন ছুটিও নেয়া হয়নি। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ১৯ জন ছাত্র উপস্থিত।
শিক্ষক অনুপস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষিকা শাহিনা বিরক্তি প্রকাশ করে উল্টো জানতে চান সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা। কুঞ্জনগর হুদাপাড়া নব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোন শিক্ষক আসেননি। দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র হৃদয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। মাত্র ৬ জন ছাত্রকে পাওয়া গেছে সেখানে।
এভাবে সিংহভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নানা অজুহাতে বিদ্যালয়ে যান না আবার ছুটির আগেই বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। নিয়মানুযায়ী কোন শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে বিদ্যালয় ত্যাগ করলে মুভমেন্ট রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে আসতে হয়। কিন্তু শিক্ষকরা তা করেন না।
বিদ্যালয়ে গমনাগমণের ব্যাপারে শিক্ষকদের অনেকেই জানান, অনেক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক রয়েছে যাদেরকে ১৫-২০ কিলোমিটার দুর থেকে যেতে হয়। দুর্গম অঞ্চলে যানবাহন স্বল্পতার কারণেও বিদ্যালয়ে যেতে যেমন দেরী হয় আবার ছুটির আগেই ফিরে আসতে হয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষক বদলী হলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমে যেত। অনেক শিক্ষক আছেন যারা শিক্ষক সমিতির নেতার আস্থাভাজন কিংবা রাজনৈতিক দলে জড়িত। তাদের অনেকেই শিক্ষা অফিসের পাশে চায়ের দোকানে গল্প গুজবে মত্ত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা দেখেও দেখে না।
অভিভাবকদের অনেকেই জানান, প্রাথমিক শিক্ষায় ধ্বসের কারণে শিক্ষকরা নিজেদের ছেলে মেয়েকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বিভিন্ন কেজি স্কুলে পাঠাচ্ছেন। আর এ সুযোগে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে গড়ে উঠেছে কেজি স্কুল ও শিশু শিক্ষালয়। বর্তমানে এ উপজেলায় ৮৬টি কেজি স্কুল রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানেরাও কেজি স্কুলের শিক্ষার্থী।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যেসব শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছেন তারা নিজের নাম ও সাধারণ যোগ বিয়োগ জানে না। নতুন করে তাদের শিখিয়ে নিতে হচ্ছে। তারা কিভাবে সমাপনী পরীক্ষায় পাশ করেছে এটা বোধগম্য নয়। এসব শিক্ষার্থীদেরকে নতুন করে শিখিয়ে নিতে হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের একটু যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া দরকার।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম জানান, সমিতির অন্তর্ভূক্ত শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করতে হয় তাই সঠিকভাবে বিদ্যালয়ে থাকা সম্ভব হয়না। একই কথা জানালেন সমিতির অপরাংশের সভাপতি হাসানুজ্জামান।
গাংনী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফারুখ উদ্দীন জানান, লোকবল সংকটের কারণে বিদ্যালয় মনিটরিং করা একটু কষ্টসাধ্য। মাত্র ৫ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার রয়েছেন যাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যেতে হয়। ইতোমধ্যে বেশ ক’জন শিক্ষককে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণু পদ পাল।