পড়ালেখা শেষ করেননি যে বিখ্যাত মানুষেরা

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়া চড়ে সে’-এমন কথা তো সবারই জানা। কিন্তু পড়ালেখা শেষ না করেও বিখ্যাত মানুষ বনে গেছেন এমন কয়েকজনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এ বিশেষ প্রতিবেদন। তার মানে এই না যে, লেখাপড়ার দরকার নেই। বিখ্যাত অনেকেই রয়েছেন যাঁরা ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েও লেখাপড়া শেষ না করে কাজে নেমে পড়েছেন। তাঁদের কাজই আমাদের জীবনের অনেক কিছু বদলে দিয়েছে আর তাঁদেরকে করেছে বিখ্যাত। চলো জেনে নেই এ রকম ১০ বিখ্যাত মানুষের কথা।

১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর :

বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জন্মেছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। জমিদারের ছেলে হলেও তাঁর ছোটবেলা কেটেছে বাড়ির কাজের লোকদের শাসনে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছিলেন। বাবার ছিল ভ্রমণের নেশা। তাই ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কৈশোরের শুরুতে একা কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। ছেলেবেলায় তাঁকে পাঠানো হয়েছিল কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে। কিন্তু কোথাও মন টেকেনি তাঁর। স্কুলের অনুশাসন ভালো না লাগায় তাঁকে ঘরেই গৃহশিক্ষক রেখে পড়ান তাঁর বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে রবীন্দ্রনাথের চোখ খুলে গিয়েছিল বাবার সাথে থেকে। বাবার সাথে কিশোর অবস্থায় ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতের বিভিন্ন এলাকা। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে দেখেছেন কাছ থেকে। আর বাবার কাছে থেকেই পড়েছেন বিখ্যাতদের জীবনী, সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ইতিহাস। ভ্রমণ ও পাঠ দুটো বিষয়ই রবীন্দ্রনাথকে স্বশিক্ষিত করে তুলেছিল।

২. বিল গেটস :

বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তি তিনি। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা। ছেলেবেলা থেকেই খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। সে জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁকে বলা হয় হার্ভার্ডের সবচেয়ে সফল ড্রপআউট। ১৯৭৩ সালে হার্ভার্ডে ভর্তি হলেও মাত্র দুই বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। ছোটবেলার বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে শুরু করেন নিজের প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে ডিগ্রি না নিলেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ৩০ বছর পর ২০০৭ সালে নিজের কাজের জন্য সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। সেই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিল গেটস বলেছিলেন, ‘আমি লোকজনকে খারাপ কাজে উৎসাহিত করি। সে কারণেই তোমাদের ডিগ্রি দেওয়ার দিনে আমাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। কারণ তোমাদের ক্লাস শুরুর দিনে যদি আমি বক্তব্য দিতাম, আমার মনে হয় তোমাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন আজ এখানে থাকতে!’

৩. স্টিভ জবস :

প্রযুক্তি দুনিয়ায় অনেকেই যাঁকে গুরু মানেন তিনি স্টিভ জবস। এমন সব প্রযুক্তি তিনি মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন, যেটা ছিল অকল্পনীয়। আইফোন, আইপড, আইপ্যাড, ম্যাক কম্পিউটার সব কিছুই এসেছে স্টিভ জবসের হাত ধরে। ভালো ছাত্র ছিলেন ছোটবেলা থেকেই কিন্তু রিড কলেজে ভর্তি হওয়ার মাস ছয়েক পরেই পড়ালেখার পাট চুকিয়ে দেন। কারণ সেখানে লেখাপড়া ছিল খুবই ব্যয়বহুল। স্টিভের পালক বাবা-মায়ের জন্য সেটা ছিল কষ্টকর। কলেজ ছেড়ে দিয়ে নিজের মতো করে কিছু করার চিন্তা থেকে বন্ধুর সাথে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল। সেখান থেকেই পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেওয়া শুরু করেন তাঁরা।

৪. ফ্র্যাংক লয়েড রাইট :

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সফল স্থপতি বলা হয় তাঁকে। জীবনে কলেজে যতটা না সময় কাটিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন বিভিন্ন কলেজের নকশা আঁকার কাজে। ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনে ভর্তি হয়েছিলেন ১৮৮৬ সালে। মাত্র এক বছর পরেই কলেজ ছেড়ে শিকাগোতে চলে যান। সেখানে বিখ্যাত স্থপতি লুই সালিভানের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। মৃত্যুর আগে পাঁচ শতাধিক স্থাপনার নকশা করে গেছেন ফ্র্যাংক। তাঁর অন্যতম সেরা কাজের মধ্যে রয়েছে ফলিং ওয়াটার এবং নিউইয়র্ক সিটির সলোমন আর গগেনেইম জাদুঘরের নকশা।

৫. বাকমিনস্টার ফুলার :

একই সাথে তিনি একজন স্থপতি, চিন্তাবিদ, আবিষ্কারক। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুবার বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। শেষমেশ পড়ালেখা শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কাজ করে গেছেন আগ্রহ নিয়ে। যদিও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। মেয়ের মৃত্যুর পর অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন তিনি, যা তাঁর কাজকে ব্যাহত করে। এমনকি সে সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন। ৩০টিরও বেশি বই লিখেছিলেন তিনি। আর স্থাপত্যবিদ্যায় তাঁর আবিষ্কার এখনো বিস্ময়কর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *