দেশে প্রায় ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও কমছে না শিশু শ্রম। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ শিশু। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। শিশু শ্রম নিয়ে করণীয় বিষয়ে সম্প্রতি এক কর্মশালায় এ চিত্র তুলে ধরা হয়।

দেশে ৫ থেকে ১৭ বছরের শিশু শ্রমিক রয়েছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। এদের মধ্যে ৫ থেকে ১১ বছরের শিশু শ্রমিক রয়েছে ১৭ লাখ; যাদের কাজ করার কোনো অনুমতি না থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে তারা। এসব শিশুর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। যা সত্যিই উদ্বেগজনক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে ১৭ টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে; এদের মধ্যে শিশু শ্রম রয়েছে ৮ নম্বরে। এই শিশু শ্রম নিরসনে ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরও এক বছর বাড়ানো হয়। তবুও সম্ভব হয়নি শিশু শ্রম নিরসন করা।

শিশু শ্রম নিরসন করতে এই মূহূর্তে সঠিক পরিকল্পনা সবচেয়ে বেশি জরুরী বলে মনে করেন ঢাবির এই অধ্যাপক।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ) নামের একটি সংগঠন সারা দেশে শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে জানায়, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে চুরি করার অপবাদে ২০১৬ সালে দরিদ্র শ্রমজীবী ১০৬টি শিশুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৫ সালে এসব নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরো ৯০ শিশু।

This slideshow requires JavaScript.

সংগঠনটির সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৭ এর মে পর্যন্ত ৬৫ জন শিশু গৃহকর্মীকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। একই সময় ২১ জন শিশু গৃহকর্মীকে ধর্ষণ ও ২১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ জন শিশু গৃহকর্মী আত্মহত্যা করে। এর বাইরেও অনেক শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

সংগঠনটির দাবি অথচ গত অর্থবছরে শিশু বাজেট ছিল একশ কোটি টাকা। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা ফেরত গেছে। এ কারণে শিশু শ্রমও নিরসন সম্ভব হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে কর্মক্ষেত্রে শিশুর বয়স অবশ্যই নির্ধারণ করে দিতে হবে। এ জন্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনের ১৩৮ ধারাতে বাংলাদেশ সরকারের অনুস্বাক্ষর করা উচিত।

শিশু অধিকার অর্জনে আরও সাফল্য পেতে সরকারের সাথে সাথে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ।

এ ব্যাপারে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারায় গত অর্থবছরে শিশু বাজেটের অর্থ ফেরত গেছে, তা ঠিক। এবার মন্ত্রণালয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও’র সমন্বয়ে ২০২১ সালকে টার্গেট করে একটি কর্ম পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর আওতায় শিশুরা কোথায় কি করছে, কোন কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে-এসব বিষয়ে জরিপ চলছে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ৫শ থেকে ৭শ কোটি টাকা দরকার। তবে এটা সরকার দিবে বলে প্রত্যাশা করছি।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে শিশুশ্রম আছে এবং তা বন্ধ করতে হবে। এই জন্য ন্যাশনাল কমিটির পাশাপাশি বিভাগীয় কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া জেলা উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ঝুকিঁপূর্ণ শিশু শ্রম আর ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসন করা হবে।

এছাড়া শ্রমিক ও মালিক বান্ধব শ্রম আইনের খসড়া প্রণয়নের জন্য ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *