কবিতা
নিস্ফল রোদন
পাখির সাথে সখ্যতা তার সেই অনাদিকাল থেকে,
বনের মাঝে ফুলের ঘ্রাণে মন যে বিভোর থাকে!
দোয়েল কোয়েল শ্যামা টিয়া মনজুড়ে গান গায়,
হৃদয় মাঝে স্বপ্ন বোনে শ্যামলা মায়ের ছায়!
ফড়িং নাচে তিড়িং বিড়িং সবুজ ঘাসের পাতে,
নুপূর পায়ে গাঁয়ের মেয়ে ছোটে তাদের সাথে!
পথের পাশে নাম হারা ফুল চেয়ে চেয়ে হাসে,
চঞ্চলা মেয়ে নেচে গেয়ে থাকে ওদের পাশে!
সেই মেয়েটি খুঁজে বেড়ায় তাহার প্রিয় গাঁও,
হৃদয়ে তার রক্তক্ষরণ তোমরা দেখে যাও!
ইট পাথরের কারাগারে বন্দিনী তার মন
সবুজ-শ্যামল গাঁয়ের পথে তাকিয়ে নিশিদিন!
কেমন অাছে পাখপাখালি খেলার সাথী ওরা,
সব কিছুই জানতে তাহার মন যে দিশেহারা!
উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে কেউ যদি নেয় খোঁজ,
কিন্তু সে যে নিস্ফল রোদন মনে মানে না বুঝ!
ছয় ঋতুর বাংলাদেশ
প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল তপ্তরোদে পোড়ে,
কিন্তু সে যে সাথে করে অাসে বৈশাখেরে!
টক মিষ্টি কাঁচা অাম ও লিচু পাকা জাম,
রোদ গরমে খেতে অাহ্ দারুণ অারাম!
বাঙালিদের বর্ষবরণ অারো হালখাতা,
মেলায় গিয়ে নাগরদোলা বাঁশি তালপাতা!
দ্বিতীয় ঋতু বর্ষাকাল মিষ্টি মধুর বৃষ্টি,
নিয়ম করে অাসে সে যে বিধাতার সৃষ্টি!
বর্ষা ঋতু ফিরে এলে জুড়ায় কিষাণের প্রাণ,
অথৈ জলে পূর্ণ বাংলা সুন্দর অফুরান!
কিঙ্কিণী পায়ে বৃষ্টি মেয়ে নেচে নেচে যায়,
পলিমাটির সোঁদা গন্ধে মন যে অাকুলায়!
তৃতীয় শরত ঋতুর রাণী সাদা নীলাকাশ,
শিউলি কাশফুলের যেনো হেথায় বসবাস!
হাওয়া এসে ভর করে যায় মেঘের পালকে,
রোদ ও বৃষ্টির মাখামাখি সবার অলখে!
গাঙচিলেরা নীড় বাঁধে ওই কাশের বনেতে,
সাড়ি বেঁধে বকেরা ধায় মেঘের বাড়িতে!
হেমন্ত হলো ঋতুকন্যা সব ঋতু তার সাথে,
মুক্তো হয়ে শিশির ঝরে সবুজ ঘাসের পাতে!
হিমেল হাওয়া বহে শান্ত পুলকিত সবার মন,
কিষাণির মন চঞ্চলা হয় দেখে সোনার ধান!
গন্ধরাজ ও হাসনাহেনার ঘ্রাণে পাগলপাড়া,
রাত অাঁধারে শিউলি ফুটে ভোরে জীবন সারা!
শীত হলো এমন ঋতু পঞ্চমে তার ঠাই,
হাড় কাঁপাণো শীতে মায়ের অাঁচলেতে উষ্ণতা যে পাই!
খেজুর রসের পায়েস পিঠে খেতে দারুণ স্বাদ,
সোনারোদে মুছে যায় শীত রুক্ষ্মতা বোধ!
সাদা শাড়ি মুড়িয়ে দিয়ে অাসে কুয়াশা,
নিশির শিশির টুপটাপ ঝরে রাতে সহসা!
পাঁচটি ঋতু বিদায় দিয়ে অাসে বসন্তকাল,
ফুলের সমারোহ পাখির গান বহে সমান্তরাল!
কোকিল ডাকে মধুর সুরে সঙ্গিনীকে তার,
লাল হলুদে সেজে অাগমন হয় যে বসন্তের!
বসন্তরাজ সাথে বয়ে অানে দিবস মাতৃ ভাষা,
রফিক শফিক বরকত সালাম বীর শহীদের অাশা!
ছয়টি ঋতুর মিলনমেলায় বইছে বাংলাদেশ,
রূপ রস গন্ধের বর্ণনা দিয়ে কভু হবেনা শেষ!
এমন সুন্দর দেশকে অামরা সাজাবো যতন করে,
যেই দেশ দেখে বিশ্ববাসীর মনটি যাবে ভরে!
নানা বর্ণের এমন দেশ অার কোথাও পাবে না,
বাংলাদেশের মতো দেশ অার কভু হবে না!
তপ্ত দুপুর
বৈশাখের নবীন তপ্ত দুপুর
নিরব নিথর ঘাটটি পুকুর
ফুরিয়ে গেছে শিমুল পলাশ
হাত ইশারায় ডাকছে যে ওই
টুকটুকেলাল কৃষ্ণচূড়া অারো
রাধাচূড়,
দেশ যে অামার অপরুপা
হৃদয়ে বীণার সুর!
গানে দোয়েল নাচে কোয়েল
ফিঙে নাচে ঝিঙে গাছে
বাবুই বানায় নিজের বাড়ি
তালগাছের পাতায়,
মৌমাছিরা গুঞ্জুরিয়ে জীবনের
গান গায়!
দেশ যে অামার প্রাণের সুরে
বৈশাখী গান গায়!
কাঠাল ফুল অামের মুকুল
জাম জামরুল অার লিচুফুল
ঘ্রাণে পবণ মাতাল চুড়,
প্রজাপতি মেলে ডানা
সবখানেতে দেয় যে হানা
গাছের ছায়ে রাখাল বাঁশি
বাজায় সুমধুর,
দেশটি অামার অপরুপা
যেনো কল্পপুর!