কত রূপে বাংলা মা
কত রূপে বাংলা মা
কৌশিক আহমেদ
গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে ঝলমলে দিন
তার মাঝে উড়ে যায় বিস্তৃত পাখা চিল,
ধীর লয়ে ডেকে যায় ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পাখি
বিলের জলে খেলা করে রৌদ্রের ঝলকানি।
কৃষকেরা জিরোয় একটুখানি গাছের ছায়ায়
বাঁশি নিয়ে বসে রাখালেরা শীর্ণকায়।
তখনি যখন হঠাৎ-
দূর গগনে ভেসে আসে কালবোশেখীর আভাস
দুরন্ত ঝড়ের সাথে মনে আসে
একবিন্দু শান্তির সুবাস।
খুঁজে পাই আমি তার মাঝে বাংলা মায়ের ছবি,
জেগে উঠে মনের কোণে লুকিয়ে থাকা কবি।
বর্ষার দিনে ঘুম ভেঙ্গে চোখ যায় জানালায়,
কালো মেঘ সকালের সুর্যকে যেন ফেলে লজ্জায়।
ঘন ঘন বিদ্যুতের আলোকে ভীত ঝলকানিতে
মন হয় দুরু দুরু, দেহখানি ভরে যায় অলস ক্লান্তিতে।
হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় ঘন বরষা,
কেন যেন হারিয়ে যায় সকল ভরসা!
পৃথিবীর সব কাজ হারায় সব দরকার
এখানে ওখানে হারাতে চায় মনটা সবার,
যে প্রিয়মুখগুলো হারিয়েছে বহু বহু দুর-
তারা যেন ফিরে আসে, মনে জাগে সুর।
টিনের চালে বৃষ্টির মধুর সুর, রাস্তায় হাঁটু ভাঙ্গা জল-
মনে জাগাতে অপার্থিব ভালবাসা হয় এই দেশটা সফল।
শরতের পরিচ্ছন্ন আকাশ, শান্ত বিকাল
ডেকে যায় গাংচিল, মনটা উতাল।
চকচকে আকাশে ম্রিয়মান সূর্যের ভাঁজে
মানুষের মন গুলো স্মৃতির খোঁজে,
তাঁর মাঝে হঠাৎই আশ্বিনের ঝড়
জাগতিক সব কিছু করে দেয় পর,
স্মৃতিপটে জেগে উঠে পুরনো মানসছবি
এদেশের প্রকৃতি সকলেরে বানায় যে কবি।
ধানের গন্ধ ভরা হেমন্ত কাল
হাসিমুখে কৃষকের আসে যে সকাল।
নতুন ধান, নতুন চাল আর নতুন আশা
মানুষের মাঝে যেন জাগে ভালোবাসা।
গ্রামের ঘরে ঘরে ব্যস্ত গরুগুলো,
সকলের মুখে হাসি ভুলে চালচুলো।
সে হাসিতে জয়ী হয় আমার বাংলা মা
তোমার বুকে নেই বুঝি কোন কালিমা।
খেজুরের রসের গন্ধে মম সকাল নিয়ে আসে শীত
শিশিরে ভিজিয়ে পা হারাই আধুনিকতার ভিত।
দীঘির জলে দলে দলে নামে বালিহাঁস,
পুকুর পাড়ে সন্ধে হতেই ভিজে যায় ঘাস।
রাত্রি নামে অনেক দ্রুত, ঝিঁঝি পোকার ডাক,
তাড়া তাড়ি লেপের তলে ডাকাই যে নাক।
সকালে মায়ের ডাক-পিঠে পুলির গন্ধ
কি যে সুখ জাগে মনে ভুলি দ্বিধা-দ্বন্দ।
এই দেশেই কেটে যাক মোর সব দিন
বাংলা মায়ের বুকেই মন বাজিয়ে যাবে বীণ।
বসন্তকালে কোকিলের ডাক জাগায় নতুন আশা,
সকল প্রানে খেলা করে জানা অজানা ভালোবাসা।
শীতের আড়মোড়া ভেঙ্গে সবুজ পাতায় সাজে বৃক্ষরাজি,
চনমনে দিনগুলো বাজায় নতুন প্রত্যাশার বাঁশি।
নাম না জানা অজস্র ফুলে ভরে আঙ্গিনা
বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ বাঁধা মানেনা।
আসছে নতুন বছর, নতুন হিসেব, নতুন আশা
দুরু দুরু বুকে জাগে নতুনের প্রত্যাশা,
বাংলা মায়ের মুকুটে পরিয়ে নতুন পালক
চলে যায় ঋতুরাজ, যেন এক দুরন্ত বালক।
ছয়টি ঋতুতে সাজানো আমার এ দেশ,
যে যাই বলুক হেথায় রয়েছি যে বেশ।
দিনগুলো কেটে যায় বৈচিত্র্যময় আশায়
স্বপ্নগুলো ধরা দেয় অজানা ভালোবাসায়।
সুন্দরের প্রতিমা এই বাংলা মায়েরে
মোরা কত যে ভালবাসি,
পৃথিবীর বুকে চিরদিন একেঁ যাবো তোমার ছবি
বুকে রবে ভালোবাসা, মুখেতে হাসি।