একজন আইনস্টাইনের গল্প
অপরাজিতা আহমেদ : একমাথা উস্কখুস্ক সাদা চুল। চোখে শিশুর সরলতা। আর মুখে এক চিলতে হাসি। সাথে কৌতূহলি দুষ্টুমি ভরা অভিব্যক্তি। এমন একটা মুখাবয় কল্পনা করতে বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন বিজ্ঞানীর মুখ। তিনি হলেন আইনস্টাইন।
পুরো নাম আলবার্ট আইনস্টাইন। জার্মানির একটি ছোট শহর উলমে এক ইহুদি পরিবারে জন্ম নেন আইনস্টাইন। তখন তিনি মহাবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন নন। বরং তখন তিনি পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া, অমনোযোগী, আনমনা এক ছেলে। বন্ধু-বান্ধবহীন এক শিশু। তার বন্ধু বলতে ছিলেন তার মা। সেই মায়ের কাছেই তিনি শুনেছেন এবং শিখেছেন বেহালা বাজানো। আজীবন এই বেহালাই ছিল তার সঙ্গী।
আইনস্টাইনকে দর্শনের বই সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। পনেরো বছর বয়সের মধ্যে তিনি কান্ট, স্পিনোজা, ইউক্লিড, নিউটনের রচনা পড়ে শেষ করে ফেললেন। বিজ্ঞান, দর্শনের সাথে পড়তেন গ্যেটে, শিলার, শেক্সপিয়ারের বই সমূহ। আর অবসর সময়ে সঙ্গী ছিল মায়ের দেওয়া বেহালা। আর তাতেই বিটোফোন, মোতসার্টের সুর তুলতেন।
কিশোর বয়সে তার গনিতের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। মাক্স টালমুড নামক চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক ছাত্রের কাছ থেকে উচ্চতর গণিত ও দর্শন বিষয়ে দীক্ষা নিতেন আইনস্টাইন। সেই সময় শিশু বিজ্ঞানের এক বই থেকে বিদুতের মাধ্যমে ভ্রমণের ব্যাপারে চিন্তা শুরু করেন আইনস্টাইন। এই চিন্তা নিয়ে তিনি দীর্ঘ ১০ বছর চিন্তা করেছেন।
এরপরের গল্পটা একটু অন্যরকম। তিনি সুইজারল্যান্ডের জুরিখে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষয় অংশ নেন। কিন্তু গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে পাশ করলেও ফেল করেন ফরাসি ভাষা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে। তবুও তাকে শর্ত সাপেক্ষে ভর্তি করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখান থেকেই স্নাতক শেষ করলেন।
এরপর সংসার চালনোর জন্য চাকরির সন্ধান করতে লাগলেন। অফিসে ক্লার্কের চাকরি নিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের খাতার পাতায় সমাধান করতেন অঙ্কের জটিল তত্ত্ব। স্বপ্ন দেখতেন প্রকৃতির দুর্জ্ঞেয় রহস্য ভেদ করার।
এরপর ২৬ বছর বয়সে, একদিন ত্রিশ পাতার একটি প্রবন্ধ নিয়ে হাজির হলেন বার্লিনের বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা ‘অ্যানালেন ডার প্যাসিক’এর অফিসে। ১৯০১ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত আইনস্টাইন পাঁচটি রচনা প্রকাশ করলেন। এসব রচনায় প্রচলিত বিষয়কে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতে আইনস্টাইনের নাম বিজ্ঞানী মহলে ছড়িয়ে পড়ল।
তারপরের আইনস্টাইনের ‘আপেক্ষিকতার তত্ত্ব’ আবিষ্কারের ইতিহাস মোটামুটি সবাই জানেন।
তবে মহান এই বিজ্ঞানীর জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, মানুষের ইচ্ছা শক্তি আর সাধনায় মানুষ সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে পারে। নিজের জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেও আইনস্টাইন নিজের সাধনা অব্যহত রেখেছিলেন।
আজ ১৮ এপ্রিল, এই মহাবিজ্ঞানীর মৃত্যুদিন। শুধু একজন মহাবিজ্ঞানী হিসেবে নন, একজন লড়াকু মানুষ হিসেবেও আলবার্ট আইনস্টাইন অনুসরণ যোগ্য।