কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে পাঁচ হাজারের বেশি শিশু হতাহত হয়েছে। এ ছাড়া আরো চার লাখ অপুষ্টিতে ভোগা শিশু জীবন বাঁচানোর জন্য লড়ছে বলে গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এমন তথ্যই জানিয়েছে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রায় ২০ লাখ শিশু বর্তমানে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এদের সিকি ভাগ সৌদি জোটের হামলা শুরুর পর যোগ হয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইউনিসেফের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৩০ লাখেরও বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। এরা বছরের পর বছর সহিংসতা, দারিদ্র্য, রোগ, অপুষ্টি ও মৌলিক চাহিদার অভাবের মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে বেড়ে উঠছে। জাতিসংঘের হিসাবে দেশটির এক কোটি ১০ লাখ শিশু অর্থাৎ ‘প্রায় প্রতিটি শিশুরই মানবিক সহায়তা প্রয়োজন’।
২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপের পর প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি করে শিশু হতাহত হয়েছে। ইয়েমেনে ইউনিসেফের প্রতিনিধি মেরিটেক্সেল রেলানো বলেছেন, ইয়েমেনে শিশুদের পুরো প্রজন্মটাই সহিংসতা ছাড়া আর কিছু চেনে না। তারা যুদ্ধের ভয়াবহতা ভোগ করছে। অথচ এটাতে তাদের কোনো হাত নেই। অপুষ্টি আর রোগবালাইয়ের কারণে মৌলিক সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যারা বেঁচে যাবে তারাও আজীবন এই যুদ্ধের শারীরিক ও মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াবে।
ইউনিসেফ ইয়েমেনে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবিও তুলেছে তারা। এ ছাড়া সংকটে থাকা শিশুদের সহযোগিতা দেওয়ার পথগুলো খুলে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এদিকে ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার গত মঙ্গলবার দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা জানিয়ে সৌদি আরবসহ অন্য মিত্র দেশের কাছে সহায়তা চেয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আহমেদ বিন দাঘের মিত্রদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইয়েমেনের নাগরিকদের দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা করতে অর্থনৈতিক সহায়তার আবেদন করেছেন।
এক ফেসবুক পোস্টে দাঘের মিত্র দেশগুলোকে তাঁদের আদানে অবস্থিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সহায়তা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। আদানই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। ইয়েমেনের রাজধানী সানা বর্তমানে হুতি বিদ্রোহীদের দখলে।
আদান সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে সৌদি আরব গতকাল বুধবার দুই বিলিয়ন ডলার ইয়েমেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইয়েমেনে হামলা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চলা এই লড়াইয়ে ৯ হাজার ২৪৫ জন নিহত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) দেওয়া তথ্য মতে, গত এপ্রিল থেকে এই অঞ্চলে কলেরা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লে অন্তত দুই হাজার ২০০ জন মারা যায়। চলমান পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘ ইয়েমেন সংকটকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছে। সূত্র : এএফপি।