কিশোরবাংলাপ্রতিবেদন: হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি পরিচিত রোগ, যা ফুসফুসের বায়ুনালির মধ্যে বাধা সৃষ্টি করে। আমরা যখন নিশ্বাস নিই তখন বাতাস শ্বাসনালির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে, তারপর বেরিয়ে আসে। হাঁপানি রোগীর ক্ষেত্রে বাতাস চলাচলের এই পথগুলো বিভিন্ন কারণে সংবেদনশীল হয়ে সরু হয়ে পড়ে। ফলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
শিশুরাই এখন হাঁপানিতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শীতে হাঁপানি-আক্রান্ত শিশুরা বেশি সংকটের সম্মুখীন হয়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো চললে একে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রোগের লক্ষণ
অনেক কিছুতেই হাঁপানির আক্রমণ শুরু হতে পারে। যেমন: বাড়িঘরের ধুলো-ময়লায় থাকা মাইট, উগ্র গন্ধ বা স্প্রে, সিগারেট বা অন্যান্য ধোঁয়া, পরাগ বা ফুলের রেণু, পশুপাখির পালক, লোমশ খেলনা, ছত্রাকের স্পোর, আবহাওয়ার পরিবর্তন, ঠান্ডা লাগা, বিশেষ কিছু খাদ্য, কিছু কিছু ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন, পেনিসিলিন প্রভৃতি, শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কোনো কোনো রাসায়নিক পদার্থ, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম প্রভৃতি। আজকাল দূষিত বাতাস গ্রহণের জন্য শিশুদের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
অ্যাজমা দেখা দিলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শো শো শব্দ, আর একটু বড় শিশুদের বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়াও অল্প কাজের পরিশ্রান্ত হওয়া বা হাপিয়ে উঠা, একটানা ঘুম না হওয়া, অল্প খেলাধূলায় হাপিয়ে যাওয়া, এসব হাঁপানি রোগের অন্যতম লক্ষণ।
চিকিৎসা
হাঁপানি রোগের স্থায়ী কোন প্রতিকার নেই। এমন কোন ওষুধ নেই যা হাঁপানি রোগকে গোড়া থেকে নির্মূল করতে দেয়। এই রোগের আদর্শ চিকিৎসা হলো নেবুলাইজার বা ইনহেলারের মাধ্যমে ব্রংকোডাইলেটর জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের উপশম করা।
মুখে খাওয়ার থিওফাইলিন বা সালবিউটামল জাতীয় ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশী। যেহেতু ইনহেল করা ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছায়, তাই এক্ষেত্রে রোগীর (ওষুধের) খুব সামান্য অংশের প্রয়োজন হয়, এবং তা তাড়াতাড়ি কাজ করে। অনেকে অজ্ঞাতবশত:ইনহেলারকে শেষ এবং ক্ষতিকর চিকিত্সা মনে করে থাকেন যা একেবারে অমূলক।
অ্যাজমা ঘনঘন দেখা দিলে শিশুর শরীর পরিমিত অক্সিজেন পায়না। আর অক্সিজেনের অভাবে দেহের বিভিন্ন কোষের গঠনবৃদ্ধি সঠিকভাবে হতে না পারায় শিশুটির গ্রোথ ফেউল্যুর হয়। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি হঁপানির কারণে শিশুর বুকের গড়ন কবুতরের বুকের খাচার আকার ধারণ করতে পারে।
এজন্য হাঁপানি প্রতিরোধের ব্যাপারে শিশুর বাবা-মাকে অধিক নজর দিতে হবে। শীতের সময় গরম কাপড়গুলো ধুয়ে অথবা রোগে দিয়ে পড়তে হবে। এলার্জিক বা উত্তেজক বস্তু, খাবার, ধূলাবালি এসব থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। আশা করি শীতের এসময়টিতে আপনার সাবধানতা তথা স্বাস্থ্য সচেতনতায় শিশু হাঁপানি জাতীয় কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে।