পশ্চিমবঙ্গে দত্তকের নামে নিলাম করে শিশু বিক্রি

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: দত্তকের নামে সেফ হোম থেকে শিশু পাচারের অভিযোগ এনেছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। রাজ্যের নানা জায়গা থেকে পাচার চক্রের অনেককেই গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, এর সঙ্গে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, হোমের মালিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

গত আগস্টে দত্তক দেওয়ার নাম করে অবৈধ উপায়ে দত্তকের নামে শিশু পাচারের অভিযোগে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বিমলা ‘শিশু গৃহ’নামের একটি হোমের কর্ত্রী চন্দনা চক্রবর্তী, তাঁর ভাই ও হোমের অ্যাডপশন অফিসারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অভিযুক্ত সাবেক প্রধান শিক্ষিকা চন্দনার স্বীকারোক্তির পর গ্রেপ্তার হন ভারতের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির মহিলা মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদিকা জুহি চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে নাম জড়িয়েছে আরও বেশ কয়েকজন বিজেপির শীর্ষ নেতার। পুলিশের অভিযোগ, চন্দনা চক্রবর্তীর হোমটি নির্বিঘ্নে চলার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য দিল্লিতে প্রভাবশালী মহলে তদবির করেছিলেন তিনি।

উত্তরবঙ্গের ঘটনার তদন্তের মাঝেই কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা থেকে একটি শিশু পাচার চক্রের হদিস পাওয়া গেছে। তিনটি সদ্যোজাত শিশুকে উদ্ধারের পাশাপাশি এক নার্সিং হোমের মালিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত জুলাইয়ে উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়ার এক ডেরা থেকে ৩২টি সদ্যোজাত ও দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই চক্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসক, নার্সিং হোমের মালিক ও এনজিও’র আধিকারিকসহ ১৮জনকে আটক করা হয়।

উত্তরবঙ্গের অভিযুক্ত হোমটি থেকে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে কমপক্ষে ১৭টি শিশুকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন ও সিঙ্গাপুরের বিদেশি দম্পতিদের কাছে দত্তক দেওয়ার নামে বিক্রি করা হয়েছে। এদের ইতিমধ্যেই বিদেশে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিআইডি ।

তদন্তকারীদের মতে, রীতিমতো নিলাম করে শিশু বিক্রি করা হতো। যে সব শিশুকে বিদেশি দম্পতিদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তাদের বয়স ৬ মাস থেকে শুরু করে ১৪ বছর। আর এদের জন্য মূল্য হাঁকা হয়েছিল ১২ হাজার থেকে ২৩ হাজার মার্কিন ডলার।

ভারতে প্রায় ২ কোটি অনাথ শিশু রয়েছে। তৃতীয় জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা ও জনগণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ করে এসওএস চিলড্রেন্স ভিলেজেস ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এদের অধিকাংশই অভিভাবকদের দ্বারা পরিত্যক্ত।

অনাথ শিশুদের দত্তক দেওয়ার জন্য সারা দেশে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকৃত বহু এডপশান এজেন্সি। এদের তদারকির জন্য প্রত্যেক রাজ্যে রয়েছে চিলড্রেন ওয়েলফেয়ার কমিটি। জেলায় জেলায় রয়েছে শিশু সুরক্ষা অফিসারও।

তবে ভারতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দত্তক দেওয়ার আইনটি কঠোর, জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বিদেশি দম্পতিরা দালালের সাহায্য নেয় বলে অভিযোগ।

পাচার বন্ধে দত্তক দেওয়ার সরকার স্বীকৃত হোমগুলোর ওপর সরকারের নজরদারি জরুরি বলে মনে করেন আইনত দত্তক দেওয়ার কাজে যুক্ত আইনজীবীরা । দ্রুত বিচারের মাধ্যমে শিশু পাচারের মতো ঘৃণ্য কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া জরুরি বলেও জানান তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *