অনলাইনে পড়াশোনায় উৎসাহী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা
কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইনে পড়াশোনায় উৎসাহী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আধুনিক জীবনযাত্রা তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভরতার কারণে এর ব্যাপ্তি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সঙ্গত কারণে ইন্টারনেট প্রযুক্তি আধুনিক সমাজেও রাখছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গ্রাম ও শহরের প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও এনেছে পরিবর্তন।
বড়রা ছাড়াও স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া অনেকেই এখন অনলাইনে পড়াশোনা করছে। যেখানে তারা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় পাঠ শেষ করছে। কেউ কেউ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের পাঠদানের কোন অংশ বুঝতে না পারলে, ইন্টারনেট থেকে শিখছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ ওয়াইডব্লিউসিএ জুনিয়র গার্লস স্কুলের তৃতীয় শ্রেণি ছাত্রী ওয়ারিসা আফসিন নাওমি বলে, আমি অনলাইন থেকে অনেক কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য পাই। স্কুলের হোম ওয়ার্কগুলো খুব সহজেই অনলাইনের সহায়তায় শিখতে পারি। আলাদা করে প্রাইভেট টিউটর দরকার হয় না। ভাবছি আমি অনলাইনে স্কুল থেকে প্রোগ্রামিং শিখব। যাতে আমার আইসিটি বিষয়ক জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। অনলাইনের সুবিধার কারণে এখন পৃথিবীর অনেক কিছুই আমার হাতের মুঠোয়। এটা আমাকে খুবই আনন্দ দেয়।
দিনাজপুরের কলেজ পড়ুয়া আশিস সৈকত পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা অনলাইনে পড়াশোনা করে। সে মনে করে, টিউটরের বিকল্প হিসেবে অনলাইন ব্যবহার করা যেতে পারে।
সে বলে, ট্র্যাডিশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্লাস করতে স্কুল, কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটিতে যেতে হয় আর অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপের সামনে বসে ক্লাস করতে হয়, পার্থক্য এটুকুই।
ই-লার্নিংকে অভিভাবকরা কীভাবে নিচ্ছেন সে প্রসঙ্গে জানতে কথা হয় অভিভাবক মাহফুজার রহমান মানিকের সাথে।
তিনি বলেন, ই-লার্নিং অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা যদি নিজে নিজে কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে, সেটা তাদের জ্ঞানের পরিধিকে অনেক বাড়িয়ে তুলবে। তবে, পড়ার নামে ফেইসবুকিং বা অন্যকিছু করা উচিত নয়, যা তার বয়সে অনুমোদনযোগ্য নয়।
মতিঝিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক ফাহাদ ইবনে হাই বলেন, অনলাইন পড়াশোনা যৌক্তিক এবং ইতিবাচক। তবে, শ্রেণিকক্ষে সরাসরি যিনি আপনাকে শিক্ষা দেবেন তার বাচনভঙ্গি, ব্যক্তিত্ব আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আর তার সাথে ভাবের আদান প্রদান করা সম্ভব। কিন্তু অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় সেই সুযোগ নেই।
তিনি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখবেন, আপনি যেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেন, প্রযুক্তি যেন আপনাকে ব্যবহার করতে না পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শিক্ষাকে আনন্দদায়ক ও সহজে অনেক কঠিন বিষয়কে বোঝাতে চাইলে, ই-লার্নিং প্লাটফর্মকে ডেভেলপ করা দরকার।
ই-লার্নিং নিয়ে সরকারের সফলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার প্রাইমারি এডুকেশনের প্রায় ২১টি ন্যাশনাল কারিকুলামের অনুসরণ করে টেক্সবুকগুলোকে ডিজিটাল ইন্টারেকটিভ মাল্টিমিডিয়া কন্টেটে রূপান্তর করা হয়েছে। যেগুলো মাত্র এক বছরের মধ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ বার ডাউনলোড করা হয়েছে। ফলে, শহর ও গ্রামের শিক্ষাবৈষম্য ছাড়াও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমিয়ে আনতে ডিজিটাল টেক্সট বুক অনেক সহায়ক।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে অনলাইনে শুধু গেইমস খেলে কিংবা ফেইসবুকিং করে সময় অপচয় না করে, সেজন্যে শিক্ষণীয় বিষয়গুলোকে আরও আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে, প্রিন্টেড ভার্সনে যত বই আছে সব গুলোকে ডিজিটাল ভার্সনে নিয়ে আসার পাশাপাশি ব্রেইন ডেভলপমেন্ট গেইম তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, অনলাইনের শিক্ষাকে উপভোগ করার জন্যে আইসিটি ডিভিশন থেকে গেইম ও অ্যাপস ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও গেইম ডেভলপ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এডুটিউব নামের অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক ফাহাদ হোসেন। তার মতে, ই-লার্নিং শিক্ষার্থীদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, যখন আমার ভিডিওতে কেউ কমেন্ট করে যে তারা বুঝতে পারছে বা একটা বিষয়ে তাদের সমস্যা দূর হয়েছে তখন আমি খুব আগ্রহী হয়ে উঠি। আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা যদি অনলাইনটাকে এডুকেশনের টুল হিসেবে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে তাহলে পড়ালেখার প্রতি ভয়ও দূর হবে।
ঢাকায় রেপটো এডুকেশন সেন্টার নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইস্তিয়াক সিয়াম বলেন, বর্তমানে রেপটোতে রয়েছে দেড়শর বেশি কোর্স ও ৩৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ক্লাসরুমের পাঠদানের জন্যে শিক্ষকের নানা ধরণের উপকরণের প্রয়োজন। স্বল্প জায়গায় অনেক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পড়ানো যায় না। অন্য দিকে, অনলাইনে কোর্স করতে সেগুলোর কিছুই প্রয়োজন হয় না। শুধু ইন্টারনেট সংযোগসহ যেকোন স্মার্ট গেজেট থাকলেই আপনি খুব সহজেই অনেক কিছু শিখতে পারেন।
যুক্ত্ররাষ্ট্রের অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোডকাডেমি-র যাত্রা শুরু ২০১১ সালের অগাস্টে। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিমস, ই-মেইলে হ্যালোকে জানান, কোডকাডেমি-তে সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ কোডিং শিখছেন। এদের প্রায় অর্ধেকই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের সদস্য।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে এরকম তিন লক্ষ শিক্ষার্থী পেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

