সফল সন্তানদের পিতা-মাতার কিছু বৈশিষ্ট্য!

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: সকল পিতা-মাতার ইচ্ছা থাকে তাদের সন্তান জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সাফল্যের সঙ্গে বড় হয়ে উঠুক। শুধু দেখভালই নয় এই সফল সন্তানদের পেছনে বাবা-মায়েদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য কাজ করে থাকে। যার কারণে সন্তানদের সাফল্যের হাড় অনেকখানি বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী সেই বৈশিষ্ট্য।

সন্তানদের ঘরের কাজ করতে দেন

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডীন জুলিয়া লিথকোট বলেন, ‘আপনার সন্তান তার এঁটো থালাবাসন যদি না ধুয়ে থাকে, তার মানে অন্য কেউ সেই কাজটা করে দিচ্ছে। তারা ছোট থেকেই বুঝতে শিখে যায় যে তাদেরকে যেকোন ধরণের কাজ করা থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সে শিখতে পারে না, ঘরের কাজে নিজের কিছু অবদান রাখার জন্যে নিজের কাজটুকু নিজের করা উচিৎ।’

লিথকোট বিশ্বাস করেন যে, যে সকল শিশুরা নিজের কাজ নিজে করে বড় হয় তারা চাকরি জীবনে একজন চাকরিজীবী হিসেবে ভালো কাজ করতে পারেন। অন্যান্য সকল সহকর্মীদের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারেন এবং বুঝতে পারেন কীভাবে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

সন্তানদের সামাজিক হতে শেখান

পেন্সিল্ভ্যানিয়া ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা সমগ্র অ্যামেরিকার কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে ২৫ বছর বয়সী প্রায় ৭০০ ছেলেমেয়ের উপর গবেষণা করে এক অভাবনীয় তথ্য পেয়েছে। সামাজিকভাবে যে সকল শিশু অনেক বেশী সক্রিয় ছিল কিন্ডারগার্টেনে পড়া অবস্থায়, প্রায় দুই যুগ পরে পরিণত বয়সে এসে তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অনেক বেশী সফল হয়।

যাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের চমৎকার সম্পর্ক থাকে

২০১৪ সালে গরীব পরিবারে জন্ম নেওয়া ২৪৩ জনের উপর এক গবেষণা করে দেখা গেছে যে, যারা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে জন্মের পর প্রথম তিন বছরে পরিপূর্ণ এবং দারুণ অনুভুতিপূ্র্ণ সম্পর্ক পেয়ে থাকে তারা ৩০ বছর পর তাদের ব্যক্তিগত জীবনে এবং সামাজিকভাবে অনেক বেশী গুরুত্ব পেয়ে থাকে।

পিএসওয়াই ব্লগ তার রিপোর্টে প্রকাশ করে, যে সন্তানেরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে নিবিড় যত্ন এবং ভালবাসা পেয়ে বড় হয় তারা মানসিকভাবে অনেক বেশী শক্ত হয়ে বড় হয়।

যে সকল বাবা-মায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে

ইয়ুনিভার্সিটি অফ ইল্লিনইস এর এক স্টাডি রিভিউতে উঠে আসে, যে সকল পরিবারের বাবা এবং মায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না সে সকল অভিভাবকদের সন্তানরা খুব বেশী সাফল্য লাভ করতে পারে না। বাবা এবং মায়ের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার ফলে একটা সংসার ভেঙে যায় এবং সাথে ভেঙে যায় পারিবারিক আবহ। এর প্রভাব পড়ে সন্তানের মনের উপর প্রবলভাবে। যার কারণে সেই সন্তানেরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং যে কারণে তারা খুব একটা সফল হতে পারে না।

সন্তানদের উপর অনেক বেশী প্রত্যাশা রাখেন

ইয়ুনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়ার প্রফেসর নীল হাফলন এবং তার সহকর্মীরা একটি জাতীয় সার্ভের কিছু তথ্য নিয়ে ২০০১ সালে জন্ম নেওয়া ৬,৬০০ জন শিশুর উপরে গবেষণা চালিয়ে আবিষ্কার করেন, যে সকল বাবা-মায়েরা সন্তানদের উপর বেশী প্রত্যাশা রাখেন, সে সকল সন্তানেরা বেশী ভালো ফলাফল করে থাকে।

কারণ, সন্তানেরা জেনে থাকে, বাবা-মা তার কাছ থেকে কতটুকু আশা করছে। এবং তারা সেইভাবেই কাজ করার চেষ্টা করে যেন প্রত্যাশিত ফলাফলের কাছাকাছি ভালো তারা করতে পারে।

যে বাবা-মা উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন

ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের মনস্তত্ববীদ স্যান্দ্রা ট্যাং জানান, যে সকল মায়েরা তাদের সময়ে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে ছিলেন, তাদের সন্তানেরাও পরবর্তিতে তাদের মায়ের মতোই উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে।

১৯৯৮-২০০৭ সালের মধ্যে যে সকল বাচ্চারা কিন্ডারগার্টেনে ঢুকেছিল তাদের মধ্যে থেকে ১৪,০০০ জন বাচ্চাদের মায়ের উপর গবেষণা করে পাওয়া যায়, যাদের মায়েরা খুব কম বয়সেই বিয়ে করে ফেলেছিলেন এবং পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি, তাদের সন্তানেরাও পরবর্তি সময়ে পড়ালেখাতে খুব একটা এগোতে পারেনি।

তারা কম স্ট্রেসড থাকেন

সাম্প্রতিক সময়ের ব্রিজিড স্কুলেটের রিসার্চ থেকে বের হয়, যে সকল মায়েরা খুব বেশী স্ট্রেস বোধ করেন সবসময়, সকল বিষয় নিয়ে তাদের সন্তানেরা কখনোই ভালোমতো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ, মায়ের স্ট্রেস সন্তানের মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।

এই টার্মকে বলা হয়ে থাকে ‘ইমোশনাল কন্টাজিয়ন’। যার ধরণ অনেকটা ঠান্ডা লাগার মতো। অর্থাৎ, একজনের ঠাণ্ডা লাগলে ভাইরাসের কারণের পাশে যিনি থাকেন তারও ঠাণ্ডা লেগে যায়। যে কারণে অতিরিক্ত স্ট্রেসড থাকা মায়েদের এই অভ্যাস তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রতিফলিত হতে থাকে।

সাফল্য নয়, প্রচেষ্টাকেই তারা বেশী গুরুত্ব দেন

প্রায় এক যুগেরও বেশী সময় ধরে শিশু এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর কাজ করা স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ক্যারোল ডোয়েক বের করেছেন, প্রায় সকল সাফল্যকে দুইভাবে দেখে থাকে।

“ফিক্সড মাইন্ডসেট” এর মানুষেরা ভেবে থাকেন তাদের সকল বুদ্ধিমত্তা এবং ক্ষমতা জন্ম থেকেই একদম নির্দিষ্ট করে দেওয়া। তাই তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং ক্ষমতার সঙ্গে মিল থাকে এমন ক্ষেত্রেই শুধুমাত্র সাফল্য লাভ করতে কাজ করতে চান এবং যেকোন উপায়ে হোক হেরে যাওয়াকে এড়িয়ে চলতে চান।

“গ্রোথ মাইন্ডসেট” এর মানুষজন ঠিক তার উল্টো। তারা যেকোন ধরণের চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী এবং তারা সবসময়েই যেকোন ধরণের নতুন কিছু করতে সদা প্রস্তুত। হেরে যাওয়াকে তারা ভয় পান না। বরং হেরে যাওয়ার মধ্যে থেকে নতুন কিছু শেখাকে তারা বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। 

তারা সন্তানদের ‘মনের জোর’ বাড়াতে সাহায্য করেন

২০১৩ সালে ইয়ুনিভার্সিটি অফ পেনসিভেনিয়ার সাইকোলজিষ্ট অ্যাঞ্জেলা ডাকওর্থ তার ক্ষমতাশালী এবং সাফল্যের চাবিকাঠি মূলক চারিত্রিক বৈশিষ্ট ‘মনের জোর’ নামক টার্ম আবিষ্কারের জন্য ম্যাকআর্থ এর ‘জিনিয়াস’ পুরষ্কার পেয়েছেন।