কিশোরবাংলাপ্রতিবেদন: চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিশুর প্রারম্ভিক মানসিক বিকাশ । একটি শিশু পরিবেশ থেকে যত বেশী উদ্দীপনা পায় তত বেশি তার মনের জানালা খুলে যায়। যেমন জন্মের আগে গর্ভাবস্থার ৫ মাস বয়স থেকেই সন্তান কানে শুনতে পায়, আর মা যদি কোন কিছুতে ভয় পায় সেক্ষেত্রে গর্ভের বাচ্চাও শিহরে উঠে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর সূচনা হয় মাতৃগর্ভে। স্বাস্থ্য–পুষ্টি যা-ই বলি, সেটা মাতৃগর্ভ থেকে শুরু হতে হবে। এ জন্য মাতৃকালীন যত্ন দিতে হবে। এটা দিতে না পারলে গলদটা এখানেই থেকে যাবে।
জন্মের পর একটি বাচ্চা বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী ও আত্মীয়-স্বজন থেকে যত বেশী অনুভূতি বা অনুপ্রেরণা পায় (হতে পারে রঙিন কোন খেলনার আওয়াজ বা স্রেফ তালি, আদর কিংবা নিছক কোন কেচ্ছা/ছড়া) তার মস্তিষ্কের ‘সংযোগ’ তত বেশী খুলে যায়।
এখানে মস্তিষ্কের নিউরনের ‘আন্তঃকোষীয় সংযোগ’কেই মনের ‘জানালা’র সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই ‘জানালা’ খোলার খেলা চলতে থাকে। এই ৩ থেকে ৫ বছর বয়সেই নির্দিষ্ট হয়ে যায় শিশুটি বড় হয়ে ডাক্তার হবে না ইঞ্জিনিয়ার হবে, ধার্মিক হবে না জঙ্গি হবে।
সবটুকুই যদি ‘জিন’ এর কারণে হত তাহলে ডাক্তার বাবা-মার সব ছেলে মেয়েই ডাক্তার হত। সুতরাং শিশুটি ভবিষ্যতে কি হবে তা নির্ভর করে জন্মের প্রথম ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ‘পরিবার তথা পরিবেশ থেকে কি অনুপ্রেরণা’ পেল তার উপর। অনেকসময় দেখা যায় শুধুমাত্র এই বয়সে ‘সঠিক অনুপ্রেরণা’ পাবার কারণে গরীব রিকশাওয়ালার দত্তক দেয়া সন্তান ইউরোপের কোন এক দেশের এমপি। শিশু মেধা বিকাশে অল্প বয়সে সঠিক ‘অনুপ্রেরণা’ দেবার পাশাপাশি দু’টি কথা না বললেই নয়- প্রথমত: গর্ভাবস্থায় মায়ের নিয়মিত ‘চেক-আপ’ এবং দ্বিতীয়ত: জন্মের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত ‘মায়ের বুকের’ দুধ নিশ্চিত করা।
শিশুরা হলো দেশের সম্পদ। সম্পদ যেভাবে যত্ন করে রাখতে হয়, শিশুদেরও তেমন করে যত্ন করতে হবে। এটা যদি শুধু সরকারের হাতে ছেড়ে দিই, তাহলে ভুল হবে। কারণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য দেশের প্রেক্ষাপটের মধ্যে অনেক তফাত।
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন বিক্ষিপ্তভাবে শিশুদের জন্য কাজ করছে। এসব কাজ পরিকল্পনা করে সমন্বিতভাবে করা প্রয়োজন। শিশু যখন ভ্রূণ অবস্থায় মায়ের গর্ভে থাকে, তখন থেকেই শিশুর যত্ন নেওয়া উচিত।