শিশুদের হাতে প্রযুক্তি: বন্ধু না শত্রু !

কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ চার বছরের শিশু আয়ান অপেক্ষায় বসে থাকে, কখন তার বাবা ঘরে ফিরবে। মা ফোন ধরতে দেয় না। বকুনি দেয়। ফোন লুকিয়ে রাখে। সেজন্য অবধারিতভাবে বাবার ফোনই তার শেষ ভরসা। ঘরে ফিরলেই বাবার ফোনে সে গেমস খেলবে।

তিন বছরের পিথুর হাতে তো ফোন না দিলে ঘুমোবেই না। ফোনে কার্টুন দেখতে দেখতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে। তারচেয়ে আরো কম, দুই বছরের হাবলুর হাতে ফোন না দিলে সে কিছুতেই মুখে খাবার নিবে না। আগে হাতে ফোন দিতে হবে, একটা ঝাকানাকা মিউজিকের গান ছাড়তে হবে। তারপর সে মিউজিকের তালে তালে হাবলু মুখে খাবার তুলবে।

ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু প্রযুক্তির চিরচেনা যুগে এ দৃশ্যগুলোও এখন নিত্যনৈমিত্তিক, অতি সাধারণ। জ্ঞানীজনেরা আগে বলতেন, বাচ্চাদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে না দিয়ে বই তুলে দাও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সে বই-ই যদি মোবাইল ফোনে ঢুকে পড়ে, একটা  গোটা ক্লাসরুম যখন মোবাইল বা ট্যাবের স্ক্রিনে ভেসে উঠে, তখন আপনি কি করবেন? নিশ্চয়ই সুযোগ-সুবিধা কিংবা বাস্তবতার নিরিখে শুধু মোবাইল ফোন তুলে দেয়া নয়, এর পিছনের আয়োজনটুকুও আপনি আপনার সন্তানের জন্য সেরে নিবেন।

প্রসঙ্গক্রমে এবার মূল কথায় আসা যাক। হালের করোনা ভাইরাস মানুষের চলাচলকে সীমিত কিংবা কোয়ারান্টাইনে বন্দী করলেও তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক মহাবিপ্লব ঘটিয়েছে, এটা এক প্রকার অনস্বীকার্য। আবিষ্কার হয়েছে  ‘অনলাইন ক্লাস’ নামক এক তত্ত্বেরও। এ ধারণাটি অন্তত আমাদের দেশের জন্য একেবারেই নতুন। অনির্দিষ্টকাল কিংবা অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক আশার আলো হয়ে এসেছে এসব অনলাইন ক্লাস। শিশু শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকলের পাঠদানই কমবেশি চলছে অনলাইনে। যেখানে শুধু রাষ্ট্র থেকে নয়, পরিবার থেকেও মিলছে উৎসাহ। যার কারণে হাইস্কুল পড়ুয়া যে শিক্ষার্থীও এতদিন বাসায় ফোন ধরার সাহস পেত না, সেখানে প্রাইমারী লেভেলের বাচ্চাদের নিজস্ব ফোনের মালিকানা চলে এসেছে, সাথে আবার ইন্টারনেট সংযোগও।

পরিবর্তনের হাওয়া আমাদের বোধের জায়গাতেও কিছুটা অন্তত হাওয়া লাগিয়েছে। বড়দের কথা বাদ দিলে শিশুদের কাছে এতদিন যেখানে স্মার্টফোনও অভিন্ন কোনো খেলনা সামগ্রী কিংবা বিনোদনের জগত ছিল, সেখানে এটিও অন্তত পড়াশোনা কিংবা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হয়ে উঠতে পেরে এর সুফল ভোগের তৃপ্তি যে কেউই পেতে পারে। প্রযুক্তির বৈশ্বিকতায় পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে আমাদের শিশু কিশোররাও এখন হাতের মুঠোয় বন্দী মুঠোফোনে জানার পরিধিও বিস্তৃত করছে অনেকদূর পর্যন্ত।

আমাদের দেশে অনলাইন ক্লাসের ধারণা নতুন, শিশু কিশোরদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সংখ্যা উন্নত দেশের তুলনায় কম হলেও ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু বহিঃবিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে শিশুকিশোরদের স্মার্টফোন ব্যবহারের বাস্তবতা কেমন, এবার সেটাও একটু জেনে আসি।

যুক্তরাষ্ট্রে ১০-১২ বছরের এমন শিশুদের মধ্যে ৪৫% নিজস্ব স্মার্টফোন ব্যবহার করে। ৮ কিংবা তার কম বয়সী শিশুদের ৪২% ব্যবহার করে নিজস্ব ট্যাবলেট। ইউরোপের ৯-১৬ বছরের এমন শিশুদের মধ্যে ৪৬% এরই রয়েছে নিজস্ব স্মার্টফোন। সর্বোচ্চ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার (৯৮%) শিশুদের মধ্যেও এ সংখ্যাটা সবচাইতে বেশি। ইউরোপ, আমেরিকায় যেখানে সেটা শতকরা পঞ্চাশ ভাগেরও নীচে, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ায় এ হার ৭২%। দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকার বেশির ভাগ দেশেই শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সংখ্যাটা কম হওয়ার প্রধান কারণ দারিদ্রতা। সে তুলনায় এশিয়ার দেশগুলোতে এই হার বেশি এবং দিনকে দিন বাড়ছেই। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই সে সংখ্যাটা দেড়শ মিলিয়নের বেশি। সিংগাপুরে ১২ বছর বয়সী শিশুরা দৈনিক গড়ে সাড়ে ৬ ঘন্টা করে স্মার্টফোনেই সময় কাটায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেটা আরো বাড়তে থাকে।

চীন, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ সব দেশেই শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এটাকে বিজ্ঞানীরা যেমন প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ হিসেবে দেখছেন, ব্যবসায়িকরা পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যে অর্থনীতির সচল চাকা হিসেবে দেখছেন, রাজনৈতিক চোখে শিশুদের আত্মনির্ভরশীলতা হিসেবেও অনেকে হিসেব মিলাচ্ছেন, ঠিক সেখানেই আবার মনোবিদদের আপত্তি। শিশুর অতি আত্মনির্ভরশীলতা শিশুকে ঝুঁকিতে ফেলছে তার বেড়ে উঠার সময়ে। শিশুদের স্মার্টফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ার ফলে তাদের ঠেলে দিচ্ছে এটির প্রতি তীব্র আসক্তির পথে। যার কারণেই অনেক মনোবিদ মনে করেন, শিশুরা একবার স্মার্টফোনে আনন্দ পেয়ে গেলে তার থেকে বের হওয়া কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পরিবারের সাথে দূরত্ব, সামাজিকভাবে অসামাজিক হয়ে উঠা, মেন্টাল গ্রোথের ব্যঘাত ঘটাকে স্মার্টফোনের আসক্তির কুফল হিসেবেই তারা দায়ী করছেন। গবেষণায় জানা গেছে, যেসব শিশুরা ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত, তারা বড় হলেও বন্ধুর সংখ্যা বাড়াতে পারে না। সোশ্যাল মাধ্যমে অনেক বন্ধু বানালেও বাস্তব জীবনে তাদের বেশিরভাগকেই পড়তে হয় নিঃসঙ্গতার কবলে। এছাড়াও স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুরা মাঠে খেলতে বের হয় না। ফলশ্রæতিতে তাদের শারীরিকভাবেও বেড়ে উঠতে সমস্যা হয়। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে হাতের আঙ্গুলের স্নাছুগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে আঙ্গুলের শক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। যদি আরো জটিল রোগের হিসেব করি, তাহলে স্মার্টফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নির্গত মারাত্মক ক্ষতিকর আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির কথা বলতেই হয়। যেটির কারণে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মারণব্যাধি ক্যান্সারও। গবেষণায় এও মিলেছে যে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের সিংহভাগই স্মার্টফোন বা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে আসক্ত, যারা গড়ে দিনে ছয় বা সাত ঘন্টার বেশি সময় কাটায় শুধুমাত্র স্মার্টফোন নিয়েই। শিশুদের মাথার স্কালের চামড়া এবং হাড়গুলা সফট থাকে, যা দিয়ে অনায়াসেই স্মার্টফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নির্গত আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং কোষের মিউটেশন ঘটিয়ে ক্যান্সারে পরিণত করতে পারে। আরেকটি উদাহরণ দিলে আপনার চোখে পড়বে। ইদানীং অনেক শিশুর চোখেই পাওয়ারের চশমা দেখা যায়। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে, শহর অঞ্চলের বাচ্চাদের। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রমাণিত, যেসব শিশুরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের শতকরা ১০ জনের ৭ জনই দৃষ্টিক্ষীণতায় আক্রান্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানে যে সমস্যাকে আমরা বলি, মায়োপিয়া।

পরিমিত এবং নিয়ন্ত্রিত স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ দ্রæত ঘটে, ব্রেইন শার্প হয়। অনেক শিক্ষামূলক এ্যাপস্ ব্যবহারে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটে, জ্ঞানের দ্বার উন্মোচন করতে পারে। শিক্ষামূলক গেমস খেলে, ভিডিও দেখে শিশুর ক্রিয়েটিভিটি বাড়ে, নতুন কিছু জানার আগ্রহের তৃষ্ণা জাগে, সময়ের চেয়ে শিশু এগিয়ে যায় অনেক দূর। এসব সত্য স্বীকার করতে যেমন সবাই বাধ্য; তেমনি উল্টো পিঠের দৃশ্যটাও কুৎসিত, অভিজ্ঞতাও খুব একটা সুখকর নয়। স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুরা সাইবার বুলিং, শিশু অপরাধ, পর্ণোগ্রাফিতে জড়িয়ে পড়ছে। যা কিনা একটি শিশুর জীবন কিংবা তার পরিবারের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরূপ।

এবার একটু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফিরি। সম্প্রতি অনলাইনে ক্লাসের মাধ্যমে স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েছে, বেড়েছে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন যাওয়ার সুযোগও। এতে অন্তত শিশুরা তাদের ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে, বাসায় বসে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগও পাচ্ছে। অনলাইন ক্লাসের বাইরেও আমাদের দেশের শিশুরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে, ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ করছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের নতুন কাজের খবর জানান দিচ্ছে। অনেকে আবার ফ্রিল্যান্সিং করেও অর্থ আয়ের সুযোগ পাচ্ছে যা কিনা আবার আমাদের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। তবে উল্টোপিঠের দৃশ্যটাও দেখে নিলে বাস্তবতা টের পাওয়া যাবে। স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুরা পারিবারিক বন্ধন হারিয়ে ফেলছে, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে, নানা ধরনের কিশোর অপরাধেও নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং এর সন্ধানও মিলেছে, যেখানে সবকয়টি অপরাধের মূল সূত্র স্মার্টফোন এবং অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। মনিটরিংয়ের সুযোগ না থাকায়, অনলাইনে রাতারাতি জনপ্রিয়তা অর্জনের মোহ কাজ করায় এবং টুকটাক অর্থ আয়ের সুযোগ থাকায় ১২-১৭ বছর বয়সী শিশুদের দ্বারা এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

প্রযুক্তির মহাবিপ্লবে সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে। এটির সাথেই সভ্যতা এবং সবাইকেই এগিয়ে নিতে হবে। এটি মেনেই উন্নত দেশগুলোও তাদের শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। তবে সেখানে শিশুদের মনিটরিং করছে, ইন্টারনেট ব্যবহারে শিশুদের জন্য সীমাবদ্ধতা রাখছে, বাচ্চাদের উপযোগী কন্টেন্ট বানাচ্ছে, তাদের উপযোগী শিক্ষামূলক এ্যাপস্, গেমস, সিনেমা তৈরির প্রতি জোর দিচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সাথে প্রতিটি পরিবারকে যুক্ত করছে, তাদের জন্যেও গাইডলাইন তৈরি করছে। এমনকি শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলো মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও নজর বাড়াচ্ছে। রাষ্ট্রীয় জিডিপির একটা অংশই এখন বরাদ্দ দিচ্ছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য। যেগুলোর কোনোটাই আমাদের দেশে নাই বললেই চলে। যার কারণে শুধুমাত্র স্মার্টফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং ইন্টারনেটের প্রসার ঘটালেই চলবে না, এর জন্য মনিটরিং এবং গুণগত মান বাড়ানোর জন্য নজর রাখাও এখন সময়ের দাবী।

শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের দিকে নজর রাখছে জাতিসংঘ, ইউনিসেফসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বড় অংকের অনুদান মেলে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারে তারা কিছু গাইডলাইনও দিয়েছে। তাদের গাইডলাইনেই রয়েছেÑ ১৪ বছরের আগে শিশুকে স্মার্টফোন নয়, ১৩ বছরের আগে শিশুকে সোশাল মিডিয়ার সাথে পরিচয় করানো নয়, খাবার সময় এবং পারিবারিক সময়ে কোনো মোবাইল ফোন নয়, শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় লিমিটেড রাখা।

শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের বাস্তবতা এবং এর প্রভাব নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কি ভাবছেন, এ নিয়ে এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের রেজিস্টার ডা. রাইসুল ইসলাম পরাগের ভাবনাটাই তুলে ধরি। ‘মাদকের যেমন নেশা হয়, তেমনি স্মার্টফোনেরও নেশা হয়। দুটাই সমানভাবে খারাপ জিনিস। তবে শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি একটি ভয়াবহ রোগ। ৭ ঘন্টা বা তার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী শিশুরা স্মার্টফোন নির্ভরশীলতা, অনিদ্রা, হতাশা, অস্থিরতায় ভোগে। তাদের বুদ্ধির বিকাশ, সামাজিক বিকাশ এবং কগনিটিভ ডেভেলপমেন্টে ব্যাঘাত ঘটে। এসব শিশুরা যত বড় হয়, তত তাদের বন্ধুর সংখ্যা কমতে থাকে। শারিরীকভাবে বড় হলেও পরবর্তীতে এসব শিশুরা নিজেদেরকে সোশ্যাল ইন্টারেকশন থেকে দূরে রাখে এবং সোশ্যাল ফোবিয়ায় ভোগে। সেজন্য ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের হাতে কোনোভাবেই মোবাইল ফোন দেয়া যাবে না এবং এ সময়ে তাদের সামনেও পরিবারের সবাইকে মোবাইল ফোন ব্যবহারে সংযত থাকতে হবে। ২-৭ বছর বয়সের বাচ্চাদের হাতে দৈনিক ১ ঘন্টার বেশি মোবাইল ফোন দেয়া যাবে না। ৭-১২, কোনো কোনো গবেষণায় সেটি ৭-১৬ বছরের শিশুদের হাতে দৈনিক ২ ঘন্টার বেশি মোবাইল ফোন দেয়া যাবে না এবং একনাগাড়ে টানা ১ ঘন্টার বেশি ব্যবহার করতে দেয়া যাবে না। একজন শিশুর হাতে কখন স্মার্টফোন তুলে দেয়া যাবে, সেটি নির্ভর করে শিশুর ম্যাচুরিটি লেভেলের উপর। একজন শিশু যখন নিজের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, তখন তার হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়া যেতে পারে। স্মার্টফোন থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার প্রথম উপায় হচ্ছে অভিভাবকদের সংযত হওয়া। কারণ শিশুরা দেখে দেখে শিখে। তাই তাদের সামনে মোবাইল ফোন যতটা কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। আর যদি কোনো শিশু আসক্তই হয়ে পড়ে, তবে উচিত তার এবং পরিবারের সকলের স্মার্টফোন ব্যবহারে সময় নির্ধারণ করা। একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করতে পারবে এবং কিছু নির্দিষ্ট সময় ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়াও শিশুদেরকে মাঠে সমবয়সীদের সাথে খেলার সুযোগ দিতে হবে বেশি বেশি। মাঝেমধ্যে পরিবারের সাথে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে, সোশ্যাল ইন্টারেকশন বাড়াতে হবে। তবে শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ভালো দিকও অনেক রয়েছে। সেগুলার সুফল এবং গঠনমূলক ব্যবহার শিশুদের বুঝাতে হবে। লার্নিং মাধ্যম হিসেবে এটির নানামুখী ব্যবহার শিশুদেরকে বুঝাতে হবে। যেকোনো ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু সময় স্মার্টফোন ব্যবহার, এমন সুযোগে শিশুরা ভালো কাজে উৎসাহ পাবে এবং স্মার্টফোন আসক্তি থেকে মুক্তি মেলবে।’

স্মার্টফোন ব্যবহারের বাস্তবতায় এ মুহূর্তে ঠিক ফরমালিনের কথা মনে পড়ছে। ফরমালিন আবিষ্কৃত হয়েছিলো মূলত চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। কিন্তু আমরা এর ব্যবহার নিয়ে এসেছি খাদ্যে ভেজাল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে। নিশ্চয়ই স্মার্টফোন আবিষ্কারও হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির যুগকে আরো এগিয়ে নিতে। তাই এর ব্যবহারও যেন নিশ্চিত হয় মানুষের কল্যাণে, প্রযুক্তির কল্যাণে। বুড়ো, যুবক কিংবা শিশু, এবার সেটা যার হাতেই উঠুক।

লেখকঃ রাকিব আল হাসান