কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: আজকের আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির যুগের আমাদের দেশে শিশুরা কতই না অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত ও নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার। এ বছরের শিশু হত্যার সঙ্গে একটা বেদনাদায়ক অধ্যায় যুক্ত হয়েছে, সেটা হচ্ছে নৃশংসতা। সরকার ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এর মতে শিশুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশ। কিন্তু শিশুদের নিয়ে কাজ করার ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার মতে, শিশুর সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। সুস্থভাবে খেয়ে পরে নিরাপদে বেঁচে থাকা প্রত্যেক শিশুর মৌলিক অধিকার।
ইদানিং বাংলাদেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যার হার অনেক বেড়েছে। পিতা-মাতাই শিশুদের একমাত্র অবলম্বন। এজন্য শিশুদের সাথে তাদের সম্পর্ক অবশ্যই মধুর, বন্ধুত্বপূর্ণ, সুলভ এবং সহজ হওয়া উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় পিতা-মাতার প্রতি শিশুর যে মনোভাব এবং সম্পর্ক গড়ে উঠে পরবর্তীতে সেটাই তার জীবনে প্রতিফলিত হয়।
শিশুরা পিতা-মাতার উপর অধিক নির্ভরশীল। শিশুকে যদি বোঝানো যায় যে, তাকে যেমন পিতা-মাতার প্রয়োজন, তেমনি পিতা-মাতার কাছে তারও প্রয়োজন রয়েছে। শিশুরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে পরনির্ভরতা কাটিয়ে পারস্পরিক বিশ্বাস ও নির্ভরতায় পৌঁছে। যা পিতা-মাতা এবং শিশু উভয়ের জন্য সুফল বয়ে আনে। কঠোর শৃঙ্খলা শিশুদের কে যেমন ভীতু ও হতাশ করে তোলে। অন্য দিকে শৈশবে পিতা-মাতার সাথে সহজ সম্পর্ক শিশুদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। প্রহারে ও ধমকে শিশুকে নিরস্ত্র করতে চাওয়া অন্যায়। এতে তার মন সংকীর্ণ হয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
যে কোন প্রকার শারীরিক বা মানসিক আঘাত এবং বিরুপ মনোভাব তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শিশুর চাহিদা পূরণ হলে সফল আর পূরণ না হলে নিজেকে অসফল মনে করে। অসফলতা তাদেরকে রাগান্বিত, ক্রদ্ধ, ক্ষিপ্ত, বিরূপ ভাবাপন্ন ও অসন্তুষ্ট করে। ফলে তারা অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে।
পারিবারিক নেতিবাচক ঘটনা, শৈশবের বিরুপ পরিবেশ, সহিংস আচরণ প্রত্যক্ষকরণ, সামাজিক প্রতিকূল পরিস্থিতি ইত্যাদি কারণ শিশুর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরী করে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ শিশুর খিটখিটে মেজাজের অন্যতম কারণ। এছাড়া শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার মেজাজ খিটখিটে হয়। পিতা-মাতা খিটখিটে মেজাজের হলে সন্তানদের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে বড় হয়ে তারাও খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে।
অনেকের মতে এসব ঘটনার মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে বিরাজমান নৈতিকতার সংকট। যে কোন সমাজে যখন এধরণের প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তার আশু এবং দীর্ঘমেয়াদী কারণ অনুসন্ধান করা আবশ্যক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সূত্রতার কারণে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
যে কোন মূল্যে শিশুদের নির্যাতন ও হত্যা রুখতে হবে। সে ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। আমরা এ ধরণের ঘটনা আর একটিও দেখতে চাই না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত বিভিন্ন ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে এ ধরণের নৃশংস ঘটনার শিকার হচ্ছে মূলত দরিদ্র পরিবারের শিশুরা। নির্যাতনকারীর বেশীর ভাগই প্রভাবশালী। সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক সময় শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে।