শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা দূর করবেন কিভাবে?

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সেইসঙ্গে কাঙ্ক্ষিত ফল না করায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ কিশোরীর আত্মহত্যা – র খবর পাওয়া গেছে। গতকাল ফল প্রকাশিত হওয়ার পর রংপুর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ১ কিশোরসহ ১২ জন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সবশেষ জরিপ অনুযায়ি, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরী বলে জানা গেছে।
তাদের আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে পরীক্ষায় ফেল করা কিংবা আশানুরূপ ফল না করাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার কারণে কেন বাড়ছে আত্মহত্যা?
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ইদানিং পড়ালেখা ও ফলাফল নিয়ে আগের চাইতে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পড়াশোনা এখন পরিণত হয়েছে অস্থির সামাজিক প্রতিযোগিতায়। যেখানে মা-বাবা সন্তানের পরীক্ষার ফলকে সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার বলে মনে করেন।
অভিভাবকদের এই অতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব, সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উচ্চাভিলাষের কারণেই বোর্ড পরীক্ষায় পাস না করায় কিশোর কিশোরীরা আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে বলে তিনি জানান।
বয়:সন্ধিকালের এই সময় কিশোর কিশোরীদের প্রতিনিয়ত পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে হতাশা অবসাদের মতো জটিল মানসিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এ অবস্থায় তাদের শুধু পাঠ্যবইয়ের চাপে না রেখে সৃজনশীল কাজের প্রতি উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন। ভালো ফল দিয়ে নয় বরং মানবিকতার চর্চায় যারা আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন সেসব ব্যক্তিত্বের উদাহরণ দিয়ে সন্তানদের অনুপ্রেরণা দেয়ার তাগিদ দেন তিনি।
কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যার জগত থেকে দূরে সরিয়ে আনতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতা মূলক প্রচারণা, অনুপ্রেরণামূলক গল্প প্রচারের পাশাপাশি আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে পরিবারের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবকে সবচেয়ে বড় সমাধান হিসেবে দেখছেন হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার । তিনি জানান, ফল খারাপ করা পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বিরূপ আচরণের পরিবর্তে তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপার উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ভালো ফলাফলের চেয়ে ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে এবং কিশোর কিশোরীদের খেলাধুলা, গান, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল দিকগুলো বিকাশে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সচেতনতা তৈরিতে সরকারি নির্দেশে সব স্কুলে বাধ্যতামূলকভাবে একজন করে শিক্ষা বিষয়ক মনোবিদ নিয়োগের তাগিদ দেন মেখলা সরকার। শিশু কিশোররা কেমন পরিবেশে বেড়ে উঠছে তা জানতে এবং তাদের মানসিক বিকাশে কী করা প্রয়োজন সে বিষয়ে জানাতে অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত কর্মশালা আয়োজনের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।