শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে কিশোর বাংলা পরিবার গভীর শোকাহত

কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন) কিশোর বাংলা পরিবার গভীর শোকাহত। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন কিশোর বাংলার বর্তমান সম্পাদক মীর মোশাররেফ হোসেন পাকবীর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।

শাহ আলমগীর তার ৩৫ বছরের দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে একাধিক মুদ্রণ ও সম্প্রচার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পিআইবিতে যোগ দেয়ার আগে তিনি সর্বশেষ এশিয়ান টেলিভিশনের সিইও ও প্রধান সম্পাদক পদে ছিলেন।

উপমহাদেশের প্রথম শিশু-কিশোর পত্রিকা সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। সেখানে তিনি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সহসম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সুস্থ্য মানসিক বিকাশে খেলাধূলা, সাহিত্য-সংস্কতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী শিশু-কিশোর সংগঠন ”চাঁদের হাটে”র সাথে সম্পৃক্ত থেকে নিজের অবদান রেখে চলছিলেন। মৃত্যুকালে কেন্দ্রীয় চাঁদের হাটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

সময়ান্তরে দৈনিক জনতা, বাংলার বাণী, আজাদ, সংবাদ, প্রথম আলো, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশনে হেড অব নিউজ, যমুনা টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) এবং মাছরাঙা টেলিভিশনে বার্তাপ্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

শাহ আলমগীর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

পিআইবির প্রধানের দায়িত্ব ছাড়াও শাহ আলমগীর বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি বহুবার স্বীকৃতি ও পৃরস্কৃত হয়েছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে তার তৃতীয় জানাজায় অংশগ্রহণ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে মনে হচ্ছে আমার প্রথম মৃত্যু হলো। তার সঙ্গে আমার ছেলেবেলা থেকে বন্ধুত্ব। একই সময়ে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোর বাংলায় ও চাঁদের হাটের সদস্য হিসেবে এক সাথে চলা ও সাংবাদিকতা শুরু। একজন ভালো মানুষ বলতে যা বোঝায় তার সব গুণ শাহ আলমগীরের ছিল। তার মৃত্যুতে গণমাধ্যমের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।’

জানাজায় অংশগ্রহণ করে শোক প্রতিক্রিয়ায় কিশোর বাংলার বর্তমান সম্পাদক মীর মোশারেফ হোসেন পাকবীর জানান ”শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে জাতি একজন দেশবরেণ্য সাংবাদিককে হারাল। প্রতিথযশা এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে বাংলাদেশের সংবাদপত্র অঙ্গনের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। তিনি নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় কাজ করেছেন। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতার শিক্ষাগুরু হিসেবে ছিলেন ব্যাপক সমাদৃত। নম্র, ভদ্র ও মিষ্ঠভাষী শাহ আলমগীর ছিলেন সকলের কাছে প্রিয়। তিনি সাংবাদিকদের কল্যাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখেছেন। যা সাংবাদিকমহলে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিশোর বাংলার সম্পাদক আরও বলেন, শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে তার আত্মার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে আমাদেরকে তার সাংবাদিকতায় যে বর্ণাঢ্য কর্মজীবন, সাংবাদিকদের কল্যাণে শ্রম, মেধা, সততা ও নিষ্ঠার তিনি যে সাক্ষর রেখেছেন তা অনুসরণ করা। তবেই আমাদের মাঝ থেকে শাহ আলমগীর হারিয়ে যাবেন না।”

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, ডেইলী অবজারভারের সম্পাদক ও ডিবিসি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ও সাংবাদিক নেতা মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিইউএফজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ইসতিয়াক রেজা, আবু জাফর সূর্য প্রমুখ অংশ নেন।

সদ্য প্রয়াত শাহ আলমগীরকে আরও শেষ শ্রদ্ধা জানান তার সহকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন। আরও উপস্থিত ছিলেন শাহ আলমগীরের প্রিয় শিশু-কিশোর পত্রিকা কিশোর বাংলার সম্পাদক, ডেইলী অবজারভারের পরিচালক, মোহাম্মদী নিউজ এজেন্সীর প্রধান সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক মীর মোশারেফ হোসেন পাকবীর, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোঃ নূরননবী সরকার তুষার, সহযোগী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, মহা-ব্যবস্থাপক সাইফুল হক সিদ্দিকীসহ কিশোর বাংলা পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার কেন্দ্রীয় সভাপতি মিয়া মনসফ।

শাহ আলমগীরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী ও সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ।