কিশোরবাংলাপ্রতিবেদন: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খৈনকুট গ্রামের কিশোরী মোবাইল ফোন চোর সন্দেহে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত শনিবার রাত ১১ টার দিকে শিবপুর থানায় মামলা করেন আজিজার বাবা। এতে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রধান আসামি করা হয়েছে আজিজার চাচি বিউটি বেগমকে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিউটির মা সানোয়ারা বেগম, চাচাতো ভাই রুবেল ও ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগম। রাতেই তমুজা বেগমকে গ্রপ্তার করে পুলিশ। এদিকে রাত্র ১০ টার দিকে আজিজার লাশ দাফন করা হয়।
নিহত কিশোরীর নাম আজিজা খাতুন (১৩)। সে শিবপুরের খৈনকুট গ্রামের আবদুস সাত্তারের মেয়ে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা সাত্তার স্থানীয় একটি পোলট্রি ফার্মে কাজ করেন।
এদিকে মামলা করার পর বেরিয়ে আসে চাচির পরকীয়ার জের। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, বিউটির স্বামী সালাম মিয়া তিন মাস আগে মালয়েশিয়া যান। এরপর বিউটি এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি কিশোরী আজিজা তার চাচির পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলে। এজন্য বেশ কিছুদিন ধরে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বিউটি। তিনি তাঁর চাচাতো ভাই রুবেল, মা সানোয়ারা বেগম ও ফুফুশাশুড়ি তমুজা বেগমকে ডেকে আনেন। পরে মোবাইল ফোন চুরির নাটক সাজিয়ে আজিজা সেটি চুরি করে বলে অপবাদ দেন। এরপর শুক্রবার বিউটিকে ধরে নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-মুখ বেঁধে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন।
মামলার আগে নিহত আজিজার ভাই সুজন জানান, কয়েকদিন আগে তাঁর চাচির একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় আজিজাকে সন্দেহ করেন তাঁরা। সেই সময় এক সপ্তাহের মধ্যে মোবাইল ফোন ফেরত না দিলে আজিজাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন তাঁরা।
আজিজার মা রেহেনা বেগম বলেন, চুরির তিনদিন পরে আইয়্যা কইতাছে আমার দুই মাইয়্যা বলে মোবাইল লইয়্যাছে। এডা কইতাছে চাচার হুউরি (শাশুড়ি) আইয়্যা। পরে কইতাছে কবিরাজে বলে নাম কইয়্যা দিছে। আমার জিয়ারে হেন থেকে লইয়্যা গেছে। দেড়টা বাজে মুয়ো (মুখ) ধরে সিএনজিতে করে লইয়্যা গেছে গা।
আজিজার বোন মাফিয়া বলে, হেরা কইছে আমরা দুই বোনেই চুরি করছি, হেয় খাড়ইলছে, আমি আনছি। এডার লাইগ্যা আমার আব্বারে কইছে। পরে তার (চাচার) শাশুড়ি আইস্যা কইতাছে এক ঘণ্টার ভিত্তে মোবাইল বার (বের) করে দিত্যাম। না হলে খবর লইব, আগুন লাগাইয়্যা দিব।
আজিজার বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, পোড়ানোর পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আজিজা তাঁর সঙ্গে কথা বলে। আজিজা বলে, ‘বাবা, খুব ব্যথা। অসহ্য যন্ত্রণা। আমি তো চুরি করি নাই। চাচি, চাচির ভাইসহ চারজন আমার মুখ ও হাত বাইন্ধ্যা হেঁচড়াইয়া নিয়া যায়। এরপর কেরোসিন ঢাইল্যা আগুন ধরাইয়া দেয়। বাবা আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি তো মোবাইল চুরি করি নাই।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সৈয়দুজ্জামান বলেন, কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। নিহত আজিজার শরীরের দুই জায়গায় পোড়ার দাগ পাওয়া গেছে। কিন্তু কে আগুন দিয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তিনজন লোক আগুনে পুড়তে দেখেছেন, কিন্তু তাঁরা সে সময় ঘটনাস্থলে আর কাউকে দেখেননি।
উল্লেখ্য নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় চাচির পরকীয়া দেখে ফেলায় ও মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে এক কিশোরীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই কিশোরী মারা যায়।