ভিডিও গেমস আসক্তি বেপরোয়া করে তুলছে আজকের শিশু-কিশোরদের
কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ বর্তমানে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট আসক্তি শিশু-কিশোরদের আচরণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। তাদের চিন্তা ও আচরণকে বেপরোয়া করে তুলছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হবে। এই বিধ্বংসী পরিস্থিতি থেকে শিশু-কিশোরদের বের করে আনতে হবে। আর না পারলে আগামী প্রজন্ম নিয়ে আমাদের আশা করবার মত কিছু থাকবে না। শিশু-কিশোররা সামাজিক যোগাযোগ এবং সুস্থতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই নতুন করে চিন্তার সময় এসেছে। সেটা আইন, সামাজিক উদ্যোগ বা নতুন কোনো কর্মসূচির মাধ্যমেও হতে পারে।
দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণের পর সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভিডিও গেম আসক্তিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আখ্যা দিয়ে একে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা নতুন এই রোগের নাম দিয়েছে ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’। আর এ বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ হবে ২০২০ সালের শেষে অথবা ২০২১ সালের শুরুর দিকে।
বেশিরভাগ ভিডিও গেমের কনটেন্ট ভায়োলেন্স পূর্ণ। এই কনটেন্টের কারণেই তারা ভায়োলেন্স নিয়ে বড় হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের মনন। এমনকি তাদের আচরণেও বিধ্বংসী ভাব চলে আসে। কেবলমাত্র মোবাইল আসক্তি, গেম আসক্তি নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা মোট শিশুরোগীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ। আর এর মধ্যে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যাই বেশি। শিশুরা মোবাইলের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করে। তাদের সামাজিকতা কমে যায়, বই পড়ে না, মুভি দেখে না। আর দিনে দিনে ভিডিও গেমে সময় কাটানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে এবং খেলতে না পারলে শারীরিক এবং মানসিক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
আমরা মোবাইল বা ইন্টারনেট বন্ধ করে প্রজন্ম তৈরি করতে পারব না। সেটা সম্ভবও না। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে যুক্তিপূর্ণ হতে হবে, এবং এটা বাবা-মাকেই নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে দিয়ে যখন তারা অন্য কাজ করে তখন একে ‘ডিস্ট্রাকটেড প্যারেন্টিং’ বলা হয়।
ভিডিও গেমস চিন্তা ও আচরণ দুটোই পরিবর্তন আনে। মস্তিষ্কের যে সার্কিটে বিভিন্ন মাদক আসক্তি তৈরি করে ঠিক সেভাবেই ইন্টারনেটও সেখানে আসক্তি তৈরি করে।
মোবাইল ফোনে ভিডিও গেমের কারণে বর্তমানে মানুষের মধ্যে সামাজিক বিকলাঙ্গতা তৈরি হচ্ছে। তারা যোগাযোগে পিছিয়ে যাচ্ছে, অন্যের সঙ্গে মেশার ইচ্ছা বা প্রবণতা কমে যাচ্ছে, এমনকি আচরণেও হচ্ছে বিধ্বংসী। একইসঙ্গে শিশু-কিশোররা ওবেসিটিতে (স্থুলতা) আক্রান্ত হচ্ছে। নির্দিষ্ট একটা গণ্ডির মধ্যে সে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখছে। ফলে তার চিন্তা এবং কাজ করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
দেশে রিক্রিয়েশনের টুলগুলোকে নির্দিষ্ট সেন্সরশিপের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। আমি কোন টুলগুলো কোন বয়সের শিশু-কিশোর জন্য ওপেন করব সে বিষয়ে রাষ্ট্র এবং সরকারকে কাজ করতে হবে। এর বাইরে পরিবার এবং বিদ্যালয়েরও ভুমিকা রয়েছে।
গণহারে কোনো কিছুর প্রতি হ্যাঁ বা না বলা কঠিন হবে। কারণ, পৃথিবীতে সবকিছুর ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। কে কোনটা গ্রহণ করবে সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। গেমের ভেতরে অনেক শিক্ষণীয় গেম রয়েছে, শিক্ষণীয় কন্টেন্ট রয়েছে। এখন কে কোনটা নেবে-এই লাইন ড্র করা প্রয়োজন। এছাড়া আইনটা ড্র করাও জরুরি। অনেক দেশই মোবাইলভিত্তিক লার্নিং নিয়ে এসেছে, সেখানে আমরা কিন্তু পিছিয়ে রয়েছি।
গুড প্র্যাকটিসের জায়গায় না গিয়ে যদি অনেক কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করি সেটাও কিন্তু ভালো না। যেসব দেশে গেম অ্যাডিকশন বেশি সেসব দেশেও ১৮ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের জন্য কিছু নীতিমালা রয়েছে। আমাদের দেশের শিশুদের জন্যও ইন্টারনেট বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা জরুরি।