বর্তমানকে বদলে দেয় শৈশবের কষ্টের স্মৃতি

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: বর্তমানকে বদলে দেয় শৈশবের কষ্টের স্মৃতি। শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, হয়তো এমন কোনো ভয়াবহ স্মৃতি আছে যা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে, হয়তো পরিবারের অযত্নে কেটে গেছে আপনার শৈশব। পরিস্থিতি যেটাই হোক না কেন, এমন বিভীষিকাময় পরিবেশে বেড়ে উঠলে এসব কষ্ট অনেকদিন পর্যন্ত আপনাকে প্রভাবিত করবে, এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও আপনার ওপর এর প্রভাব রয়ে যাবে।

শৈশবে যা ঘটে তা বাচ্চাদের মনে গভীর দাগ ফেলে যায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদি তাদের সেই স্মৃতি, পুরনো ক্ষত না সারে, তবে পৃথিবী সম্পর্কে তাদের ধারণাটা রয়ে যায় ভয়ে ঘেরা। এসব কারণে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও তাদের পদে পদে সমস্যা দেখা দেয়।

শৈশবে মানসিক আঘাতের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। শৈশবের মানসিক আঘাত সামলাতে গিয়ে অনেকেই তৈরি করেন একটি নকল ব্যক্তিত্ব, বা একটি মুখোশ যার আড়ালে তারা জীবনযাপন করে যান।

স্মৃতিশৈশবে আমাদের সবচাইতে বড় চাওয়া থাকে যে আমাদের বাবা-মা আমাদের ভালবাসবে, আমাদের আদর করে বড় করবে। সেটা যখন তারা করেন না, শিশুরা চেষ্টা করে নিজেকে এমনভাবে পাল্টাতে যাতে বাবা-মা তাকে আরেকটু ভালোবাসে, যাতে তার প্রতি আরেকটু মনোযোগ দেয়। নিজেদের চিন্তা না করে তখন তারা বাবা-মাকে খুশি করার জন্য নিজের একটি নকল ব্যক্তিত্ব তৈরি করে। তারা সারা জীবন ভয়ে থাকে, এই মুখোশ খুলে গেলে তাকে আর কেউ ভালোবাসবে না।

নিজেকে এমন একটি খোলস থেকে বের করে আনার সবচাইতে ভালো উপায় হলো, চাইল্ডহুড ইমোশনাল ট্রমা নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হওয়া। তিনি আপনার ভেতরে থাকা আসল মানুষটিকে বের করে আনতে এবং আপনার ভীতি দূর করতে সাহায্য করবেন।

আমরা নিজেকে যেমন মনে করি, নিজের ব্যাপারে যেসব কথা ভাবি, তা আমাদের ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারটা আমাদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতেও দরকারি। আমরা যদি নিজের ব্যাপারে নেতিবাচক চিন্তা করি তাহলে তা আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, মনে হয় জীবনের ওপরে আমাদের কোন হাত নেই। নিজেকে তখন পরিস্থিতির শিকার বা ভুক্তভোগী মনে হয়। শৈশবে আপনি মানসিক আঘাতের শিকার ছিলেন, তাই বলে এখনো নিজেকে ভিক্টিম ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু অনেকেই তা ভাবেন প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরেও।

আমরা যখন ভাবছি সবকিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তখনো কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়না। অন্ততপক্ষে, জীবনটাকে ভালো চোখে দেখবো নাকি খারাপ চোখে, সেই নিয়ন্ত্রন অন্তত আমাদেরই থাকে। শৈশবে এসবের ওপরে আমাদের নিয়ন্ত্রন ছিল না, এখন আছে। পরিস্থিতি পাল্টানোর ক্ষমতা যে আমাদের আছে, এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে।

যে পরিবারে সারাক্ষণ রাগারাগি, ঝগড়াঝাঁটি চলছে, সেখানে বেড়ে ওঠা শিশু এটাই ভেবে নেবে যে রাগারাগি করাটা আসলে ঠিক, এতে দোষের কিছু নেই। আবার কিছু কিছু পরিবারে এমনটা শেখানো হয় যে কোনোভাবেই রাগ দেখানো যাবে না, রাগ অনুভব করাও ভুল- সেক্ষেত্রে আবার বড় হয়েও সেই মানুষটা রাগ করতে পারেন না। দুটোই খারাপ। কারণ রাগ চেপে রাখতে রাখতে একটা সময় আপনার আচরণ হয়ে যায় প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ। রাগ হলে সেটা সুস্থ উপায়ে প্রকাশ করুন। রাগ চেপে রাখার দরকার নেই, আবার রাগ দেখাতে গিয়ে হিংস্র আচরণ করারও দরকার নেই।

শৈশবে অনেককেই অবহেলা, তাচ্ছিল্যের মাঝে দিয়ে যেতে হয় বিভিন্ন কারণে। পরিবারের থেকে এমন আচরণের শিকার হলে মানুষটি অনেক সময়ে নিজের রাগ, ভীতির মতো অনুভূতিগুলোকে চাপা দিয়ে ফেলেন, যাতে কেউ আর এভাবে তাকে আহত করতে না পারে। শৈশবের কষ্টের স্মৃতি রয়ে যায়। কিন্তু এমনটা হবার অনেক খারাপ দিক আছে। আমরা একটি নিষ্ক্রিয়, অনুভূতিহীন জীবনযাপন শুরু করি। এটা হয়তো শৈশবে আপনাকে সাহায্য করেছে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর সেটা আপনার উন্নতিতে বাধা দেবে, আপনি জীবনে যা চান তার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *