কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসপি) ও ইবতেদায়ি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী নভেম্বরে আয়োজিত এ পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে।
পরীক্ষা শতভাগ যোগ্যতাভিক্তিক প্রশ্ন প্রণয়ন (ক্লাস শিক্ষার্থীরা যতটুকু ধারণ করতে সক্ষম সে অনুযায়ী প্রশ্ন নির্বাচন করার প্রস্তাব) ছাড়াও এই উদ্যোগের মধ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংখ্যা কমিয়ে আনা, প্রশ্নপত্রের সেট অর্ধেকে নামিয়ে আনা, আধঘন্টা আগে পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ আসনে বসারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এজন্য মন্ত্রণালয় গত ৫ মার্চ একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী আজ রবিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা বা স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তার সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিকভাবে ৬৪ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পরিবর্তে ৩২ সেট প্রশ্নপত্রের খসড়া প্রণয়ন করা হবে।
পরীক্ষা শুরুর আধঘন্টা আগে পরীক্ষার্থীদের নিজ নিজ আসনে বসানো নিশ্চিত করা হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও উপযুক্ত পুলিশ প্রহরায় ট্রেজারি/থানা/ব্যাংক হতে প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।
কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বয়ং পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছাবেন। দৈব দুর্বিপাক কোনো কারণ ছাড়া এক্ষেত্রে কোনো প্রতিনিধির ওপর দায়িত্ব অর্পণ করবেন না। কেন্দ্রসচিব, হল সুপার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতি প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে। প্রশ্নপত্র অক্ষত পাওয়ার প্রত্যায়নপত্র নেয়ার ব্যবস্থা করবে।
এছাড়াও পরীক্ষা কেন্দ্রে কেন্দ্রসচিব ব্যতীত অন্য কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মোবাইল ফোন বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইডার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ, মডারেশন এবং প্রশ্নপত্রের ইংরেজি ভার্সনকারীদের বার বার বদল না করে একই ব্যক্তিদের একাধিকবার দায়িত্ব দেয়া হবে।
প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাঠ পর্যায় থেকে দক্ষ, মেধাবি, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য শিক্ষক/কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হবে।
পার্বত্য জেলা, হাওড়সহ দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত কেন্দ্রসমুহে যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রশ্নপত্র পরিবহণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের জন্য সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্রের উপযুক্ত গোপনীতার ও নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রয়োজন।
বৈঠকে কমিটির সভাপতি মোঃ মোতাহার হোসেন এমপি সভাপতিত্ব করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, মোঃ নজুরুল ইসলাম বাবু এমপি, মোঃ আবুল কালাম এমপি, আলী আজম এমপি, মোহাম্মদ ইলিয়াছ এমপি এবং উম্মে রাজিয়া কাজল এমপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ, মডারেশন এবং প্রশ্নপত্রের ইংরেজি ভার্সনকারীদের বারবার বদল না করে একই ব্যক্তিদের একাধিকবার দায়িত্ব দেয়া হবে। প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে মাঠপর্যায় থেকে দক্ষ, মেধাবি, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য শিক্ষক/কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেয়া হবে।
পার্বত্য জেলা, হাওরসহ দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত কেন্দ্রসমূহে যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রশ্নপত্র পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এছাড়া বিদেশে অবস্থিত পরীক্ষা কেন্দ্রসমূহের জন্য সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্রের উপযুক্ত গোপনীতার ও নিরাপত্তা বজায় রাখা প্রয়োজন।
সম্প্রতি ছোট ও বড়দের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়। এ কারণে পিইসিতে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এমসিকিউ (নৈর্ব্যক্তিক) তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকের ছয়টি বিষয়ের মধ্যে বাংলায় ১০, ইংরেজিতে ২০, গণিতে ২৪, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৫০, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৫০ ও ধর্ম বিষয়ে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্র রাখা হতো।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।