প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ২০২৩ সালের মধ্যে স্কুলেই পাবে দুপুরের খাবার
কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে খাবার পাবে সব খুদে শিক্ষার্থী। মন্ত্রিসভা ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’-র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে জনপ্রতি ২২ টাকা হারে দুপুরে ডিম-কলা ও রুটি সরবারহ করা হবে। এজন্য বছরে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৭৮০ কোটি টাকা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নীতির খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ১৬টি উপজেলায় রান্না করা খাবার পরিবেশন শুরু হবে। তবে রান্না করায় সময়ের অপচয় এবং স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা ভাবা হচ্ছে। তাই একসময় এই ১৬ উপজেলার স্কুলগুলোও মূল কর্মসূচির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। তখন সব স্কুলেই ডিম-কলা ও রুটি পাবে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে দেশের ১০৪টি উপজেলার ১৫,৩৪৯ টি বিদ্যালয়ে এই খাবার দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি উপজেলায় রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। বাকিগুলোতে বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে প্রায় ৬৬ হাজার। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফও) আওতায় ২০১০ সালে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘একটি শিশুর প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদার নূন্যতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিদিনের খাবারে বৈচিত্র আনতে পুষ্টিচাল, ডাল, পুষ্টিতেল, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমি তাজা সবজি, ফল এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ডিম দিয়ে খাবার রান্না করা হবে। অভিভাবক ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে খাবারের মেনু ঠিক করা হবে।’
সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা। তারা বলছেন, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীরা ঠিকমত খাওয়া দাওয়ার সুযোগ পায় না। আবার সকাল সকাল স্কুলে যাওয়ার তাড়ার কারণেও তাদের খাওয়া হয় না। এই কার্যক্রম বাচ্চাদের অভুক্ত থাকার হাত থেকে একদিকে যেমন রক্ষা করবে, তেমনি পড়াশোনায় মনোযোগ তৈরীতে কাজ করবে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক দিবা হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই উদ্যোগকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। কারণ বাংলাদেশে অনেক স্কুলের শিক্ষার্থী আছে যারা অভুক্ত থাকে। অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে যেতে পারে না। তাই স্কুলে এমন কার্যক্রম চালু হলে বাচ্চারা খেতেও পারবে, পড়াশোনাতে মনোযোগ দিতে পারবে।’
এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর যাতে এর মান ও সরবারহে স্বচ্ছতা যেন নিশ্চিত হয় সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্কুল মিল’ নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করে। ২০১৭ সালে এ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা- ২০১৯’ চূড়ান্ত করেছে, যা এতদিন অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রান্না করা খাবার তৈরিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়, এটা পরিবেশন করতেও বেশ সময় লাগে। বিদ্যালয়ের পরিবেশেরও ক্ষতি হয়। বরাদ্দ না থাকায় এসব কাজের জন্য বাড়তি কোনো কর্মচারী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয় না। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্কুল ফিডিং বা মিড ডে মিল হিসেবে রান্না করা খাবার দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার চিন্তা চলছে।
এর পরিবর্তে সপ্তাহে তিন দিন সিদ্ধ ডিম-কলা, বাকি দিনগুলো ডিম-রুটি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য মাথাপিছু ২০ থেকে ২২ টাকা বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। এ বাবদ মাসিক প্রায় ৭৮০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, খাবার দেওয়ার ফলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। এর মধ্যে রান্না করা খাবার দিলে ১১ শতাংশ উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়। আর বিস্কুট দিলে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, সরকারি পরিকল্পনা হলো, যে এলাকায় যে ধরনের খাবারের প্রয়োজন সে ধরনের খাবার দেওয়া হবে। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র থাকবে।