কিশোর কিশোরীদের মানসিক বিকাশে কাউন্সিলিং

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: বর্তমানে কিশোরদের জন্য কাউন্সিলিং জরুরি হলেও তাদের কাউন্সিলিং করানো হচ্ছে না। বাবা-মা হয়তো সন্তানকে কাউন্সিলিং কেন্দ্রে নিয়ে যেতে লজ্জাবোধ করছেন। শুরুর দিকেন যদি কিশোরদের সংশোধন করা যায় তবে অনাকাক্সিক্ষত অনেক ঘটনা এড়িয়ে চলা যেত। সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও প্রয়োগ করা যেতে পারে কাউন্সেলিং সেবা।
শিল্পায়ন, নগরায়ন ও বিশ্বায়নের ফলে দ্রুত সামাজিক পরিবর্তন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। সামাজিক পরিবর্তন এত দ্রুত হচ্ছে যার ফলে মানুষ উদ্ভুত সমস্যার সঙ্গে উপযোজনে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা যখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমরা আশেপাশের বিভিন্ন ব্যক্তি, যেমন, পিতা-মাতা, শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব, ডাক্তার, সেবিকা, সামাজিক কর্মী, ব্যক্তিগত সচিব, আইনজীবী ও অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে কাছ পরামর্শ বা উপদেশ নেই। কেউ কেউ উপদেশ দেন, কেউ কেউ দেন তথ্য, কেউ কেউ আবার ব্যক্তিকে তার পরিবেশকে উপলব্ধিতে সাহায্য করে। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আর অধিকাংশই তা নন। যদিও তাদের সবার উদ্দেশ্যই হলো মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা, তবুও তাদের এই কার্যক্রমকে মনোবিজ্ঞানে কাউন্সেলিং বলে না।
বাংলাদেশে গত কয়েকবছর ধরে সমাজে এক ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে টেকনোলজি। আমাদের সনাতনি মূল্যবোধ আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক, টেলিভিশন, বিদেশী অনুষ্ঠান দেখে আমরা ভিনদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করছি। ফলে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ব্যবধান দেখা দিয়েছে। আমরা টেকনোলজি যত দ্রুত গ্রহণ করছি, অনুরূপ মূল্যবোধ আমরা সমানতালে গ্রহণ করতে পারছি না।
দিনদিন মানুষের আর্থিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। ফলে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের হাতে বাড়তি টাকা যাচ্ছে। এই বাড়তি টাকা তাদের নানা ধরনের নেতিবাচক কাজে যেতে সাহায্য করে। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর বাচ্চাদের মাঝে তথাকথিত আধুনিক সংস্কৃতির জন্ম নিচ্ছে।
আমাদের শহরগুলোতে পর্যাপ্ত খেলার মাঠের সংকট, সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ হওয়া, রচনা প্রতিযোগিতাসহ সহ-শিক্ষা কার্যক্রম কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে না ওঠায় তারা বিকল্প বিনোদন চর্চা করছে। আমরা আগে স্কুল থেকে এসে বিকালে খেলতে যেতাম, সন্ধ্যার সময় পড়তে বসতাম, রাতে ঘুমাতাম, সকালে উঠতাম এই সেটাপে এখন ছন্দপতন ঘটেছে। পুঁজিবাদী মূল্যবোধও এখানে কাজ করছে। কিশোরদের মধ্যে মাদকতা ছড়াচ্ছে।
আমাদের দেশে মাসুদ রানাসহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দাধর্মী ও রহস্যধর্মী উপন্যাস যখন জনপ্রিয় হয়েছিল তখন কিশোরদের মাঝে গোয়েন্দাগিরি করার এক ধরনের প্রবণতা আমরা দেখেছি। বর্তমানে বিভিন্ন ভয়ংকর ভিডিও গেমস, অ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র কিশোরদের মাঝে প্রভাব ফেলছে। এগুলো দেখে দেখে তারাও তা অনুকরণ করার চেষ্টা করছে।
সর্বোপরি শিক্ষার্থী ব্যক্তিক ও আন্তঃব্যক্তিক নেতিবাচক বিষয়গুলো মনোবিশ্লেষক হিসাবে চিহ্নিত করে যথাযথ বা কার্যকরী পরিচর্যা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। যাতে শিক্ষার্থীগণ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন এবং পঠন-পাঠনের প্রতি অধিকমাত্রায় আন্তরিক ও উৎসাহিত হতে পারে।