কিশোর-কিশোরীদের জন্য মোবাইল: আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যার অনুপাতে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা শতকরা ৭৮ ভাগেরও বেশি। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে দেশে সক্রিয় মোবাইল সংযোগের সংখ্যা আছে প্রায় বারো কোটিরও বেশী।
আজকের বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার সময়ে মোবাইল ফোন একটি অনন্য সংযোজন। বর্তমানে ছোট বড় সকলেরই যেন মোবাইল ছাড়া এক মুহুর্তও চলেনা। বর্তমান যান্ত্রিক বিশ্বে মোবাইল ফোন মানুষের জীবনে একটি মৌল মানবিক চাহিদা হয়ে দাড়িয়েছে। এর কারন আমাদের প্রত্যেকেরই জানা। বর্তমানে স্কুলগামী ও কলেজগামী কিশোর-কিশোরীদের হাতে নিত্য নতুন বাহারি মোবাইল। মোবাইল প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার কিশোর-কিশোরীদের বিপদগামী করে তুলছে। যার জন্য প্রয়োজন কঠোর আইনী পদক্ষেপ ও অভিভাবক মহলের সচেতনতা।
বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে পদ-দলিত করে যে ভাবে পশ্চিমা অপ-সংস্কৃতিকে স্বীয় মোবাইলে ধারন করছে তা নিঃসন্দেহে তাদের বিপদগামী করে তুলছে। শুধু তাই নয়, এতে কিশোর-কিশোরীদের অনৈতিক কাজে প্ররোচিত করছে এবং মেতে উঠছে মারাতœক সব অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে।
ফলে সামজিক অবক্ষয় ধীরে ধীরে মারাতœক আকার ধারন করছে। অনেক সময় অনৈতিক নীল ভিডিও কাটিং অজান্তেই ছড়িয়ে পড়ছে ইন্টারনেটে যা দেখে এখন কিশোর-কিশোরী বিপথে ধাবিত হচ্ছে। যে সময়ে তাদের চরিত্র গঠনের দিকে মনোযোগী হওয়ার কথা সে সময় তারা চরিত্র ধ্বংশের পথে হাটতে উৎসাহিত হচ্ছে। সম্প্রতি কালের পত্র-পত্রিকার অসংখ্য ঘটনা প্রবাহ এসবের  সাক্ষ্য বহন করে।               
মোবাইলের কারণে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ফেসবুক নেশা এখন সর্বাধিক। স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলে মেয়েদের মোবাইল আসক্তি হাজার হাজার পরিবারকে ফেলেছে দুর্ভাবনায়। হঠাৎ চালু হওয়া ‘মোবাইল সংস্কৃতি’ বুঝতে শেখার আগেই ফেসবুক, গুগলে উলঙ্গ বেল্লাপনাপূর্ণ ছবির ছড়াছড়ি তরুণ-তরুণীদের কচি মন বিগড়ে দিচ্ছে। চরিত্র গড়ার আগেই নষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীর চরিত্র।
নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে লেখাপড়ায় এবং পরিবার-সমাজে। জীবন গঠনের আগেই নতুন প্রজন্ম হারাচ্ছে পথের দিশা। বাবা-মায়ের ভাষায় অপরিণত বয়সে ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিষিদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সহজাত প্রবৃত্তির কারণে ছাত্রছাত্রীরা বইয়ের বদলে মোবাইলের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
দেশে প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু-কিশোরীদের হয়রানি। যুক্ত হয়েছে শিশু-কিশোরীদের উত্ত্যক্ততায় নতুন মাত্রা। সম্প্রতি ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে উঠতি বয়সের মেয়েরা। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা, নগ্নছবি এমএমএস করা, ব্লুটুথের মাধ্যমে ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া, এ ধরনের কিছু বিব্রতকর ঘটনার অহরহ মুখোমুখি হচ্ছে কিশোরীরা। যৌন নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফির মতো ভয়াবহ যৌন অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এ
সব ঘটনার জের ধরে সমাজে কিশোরীদের আত্মহত্যার ঘটনা যেমন বাড়ছে; তেমনি বাড়ছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যাও।  এ নিয়ে পরিবারের অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি মানুষ আজ উদ্বিগ প্রকাশ করছে। যৌনকর্মে ঠিক কত কিশোরী জড়িত; এর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ বিষয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে লাখ লাখ শিশু-কিশোরী বিভিন্ন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং এদের একটি বড় অংশ যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে।
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে এহেন করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করার জন্য এখনও সময় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের যতটুকু পরিধি রয়েছে, তার মধ্যেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে। পাশাপাশি আমরা যারা অভিভাবক রয়েছি তাদেরও সজাগ থাকতে হবে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের মোবাইল ব্যবহারে চরম কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।