কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: মুঠোফোন আজ আমাদের তরুন সমাজকে বিপথগামী, লজ্জাহীন করে তুলছে। মুঠোফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার তরুন সমাজকে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ২০১৮ সাল নাগাদ এ দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে নয় কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও এগিয়ে যাব সর্বাধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে এটাই কাম্য। কিন্তু এ কোন জোয়ারে আমরা গা ভাসিয়ে দিচ্ছি? স্রোত না বুঝে যদি শুধু গা ভাসিয়ে দিই তাহলে গন্তব্যে পৌছাঁ সম্ভব নয় বরং মাঝ পথে ডুবে মরার সম্ভাবনা বেশি। এ জন্য স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। আজকাল একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাওয়া যায়-হাতে, কোমরে কিংবা গলায় ঝুলিয়ে মুঠোফোন থাকা যেন এক সামাজিক মর্যাদার ব্যাপার।
আশ্চর্য লাগে যখন দেখি তরুণ সমাজ কিংবা স্কুল কলেজগামী অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা মুঠোফোন আসক্ত। আজকের তরুণ সমাজ আগামীতে সুনাগরিক হয়ে দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখবে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করবে, ব্যক্তিগত সফলতার মাধ্যমে নিজের পরিবার তথা সমাজ এবং রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের তরুণ সমাজ বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরা যেভাবে মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে তাতে করে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সুস্থ মস্তিস্কে যদি আমরা সাবলীল ভাবে চিন্তা করি তাহলে বিবেচনা করতে অসুবিধে হবেনা যে, একজন স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীর মুঠোফোন ব্যবহার তেমন জরুরী কিংবা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
একজন ছাত্র যখন মুঠোফোন নিয়ে স্কুলে যায় তখন তার পরিপূর্ণ মনোযোগ কিন্তু আর পড়াশোনায় থাকেনা, মনোযোগ তখন ভাগ হয়ে খেলা করে মুঠোফোনে নিয়ে আসা নতুন কোন ভিডিও ক্লিপ কিংবা সংগ্রহ করা নতুন কোন বিষয়ের প্রতি যা বন্ধুদের সাথে এখনো শেয়ার করা হয়নি। শুধু যে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এ অবস্থা তা নয় অন্যান্য সময়ে আরো বেশি। বিশেষ করে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সময়টুকু বর্তমান প্রজন্মের তরুণ তরুনীদের কিভাবে কাটে তা শুনলে সত্যিই অবাক হবার কথা।
আমাদের দেশের মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ নৈশ প্যাকেজের বদৌলতে পড়ালেখা আর রাতের বিশ্রাম এখন দখল করে নিয়েছে বিশেষ বিশেষ আলাপ! একজন ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুনীর কিসের এত আলাপ! এসমস্ত আলাপের বিষয় বস্তুই বা কী তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রায়ই সব মুঠোফোন কোম্পানীর বিশেষ বিশেষ অপার থাকে গভীর রাত থেকে ভোর পযর্ন্ত।
কখনো কখনো অফার দেয়া হয় পুরো রাত নাম মাত্র চার্জ নিয়ে। জানতে ইচ্ছে করে এসব অফার কাদের উদ্দেশ্যে দেয়া হয়? গভীর রাতে এদেশে কোন অফিস-আদালত কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকেনা তাহলে এ বিশেষ প্যাকেজ গুলোর বিশেষায়িত গ্রাহক কারা সহজে অনুমেয়।
মোবাইল ফোন যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলেও শিক্ষার্থীরা এর অপব্যবহারে মগ্ন হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। সমাজ থেকে তারা বিছিন্ন হয়ে পড়ছে। তারা যেন আটকে যাচ্ছে ২-৩ ইঞ্চির ছোট্ট একটা মনিটরে। বিধ্বংসী এ স্রোত থামাতে না পারলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ।