কিশোরদের অপরাধ দমনে প্রয়োজন নৈতিকতা

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন: মানবজীবনের উন্নয়নে ও মানবকল্যাণের সব বিষয়ের প্রধান নির্ণায়ক হলো নৈতিকতা। এ নৈতিকতার অভাবে শিক্ষক সঠিকভাবে শিক্ষাদান করেন না, অফিসের কাজ ঠিকমতো হয় না, মানবসেবা হয় না, অন্যের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হয় না, মানুষকে পদে পদে হয়রানি করা হয়, ধোঁকা দেয়া হয়। মানুষ কোথায় শিখবে এই নৈতিকতা? মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বড় পার্থক্য হলো মানুষ নৈতিকতাসম্পন্ন জীব, অন্য প্রাণী তা নয়। ন্যায় আর সত্যের পথ অনুসরণ করে অন্যের ক্ষতি না করে যতটুকু সম্ভব অন্যের উপকার করা, অন্যের কল্যাণ করা প্রতিটি নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষের কাজ। প্রতিটি ধর্মেই তাই নৈতিকতার কথা বলা হয়েছে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে, কারণ নৈতিকতাহীন মানুষ ধর্মীয় কাজ করে কি করবেন? শুধু শারীরিক প্র্যাকটিস? নৈতিকতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সততা, মহত্ত্ব, ন্যায়পরায়ণতা, আদর্শবাদিতা। লোভ-লালসা, সীমাহীন উচ্চাভিলাষ, বিবেচনাহীন জৈবিক কামনা মানুষকে অসত্ পথে ধাবিত করে। ফলে সমাজ ও দেশ তাতে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
আমরা দেশের, বড় বড় সিটির চারদিকে তাকালেই দেখতে পাই সুবিশাল অট্টালিকা, মনে হয় যেন দেশ আগাচ্ছে দ্রুত গতিতে, কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধ যে অবক্ষয়ের দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে, তা যদিও চোখে দেখা যায় না কিন্তু অনুভব করা যায়। এর ফলে যা হয় তা আমরা প্রত্যক্ষও করছি ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি কম। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি— এটি নৈতিকতার অবক্ষয়েরই প্রমাণ। দেশের বৈষয়িক উন্নতির সঙ্গে নৈতিকতার অধঃপতন নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কয়েক যুগ আগে যেসব অপরাধের কথা চিন্তা করা যেত না, এখন সে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সমাজে দেদার। বড় ভাইদের নামে ১০ থেকে ১৭-১৮ বছর বয়সী কিশোররা শহরে ও মফস্বলে পাড়ায় পাড়ায় গঠন করেছে গ্রুপ বা বাহিনী। তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে শিউরে উঠতে হয়। একটু কথা কাটাকাটির জের ধরেই মেরে ফেলছে গ্রুপ থেকে বহিষ্কৃত হওয়া পুরনো কোনো বন্ধুকে। সেবন করছে মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, তারি, হিরোইন। এরা পাড়ার মোড়ে মোড়ে বসে আড্ডা মারে, ইভটিজিং করে, সিগারেট ফোঁকে। এরাই নিজ পরিবার ও সমাজে অশান্তি ডেকে আনছে, এদের বিরুদ্ধে পরিবারে কেউ কথা বলার সাহস পায় না, পরিবারের কারোর কথা তারা শোনে না। আমরা কি এই কিশোর ও তরুণদের এভাবেই চলতে দিব, কেউ কিছু বলব না?
বন্ধুর জন্য, প্রতিবেশী ও ক্লাসমেটের জন্য ভালোবাসা, তাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা এসব কিশোর ও তরুণরা জানে না। কারণ তারা ভালো বই পড়ে না, ভালো সিনেমা দেখে না। বন্ধুত্বের যথার্থতা তারা বোঝে না। পরিবার শিক্ষার বড় অঙ্গন। সেখান থেকে তারা এই শিক্ষা পায়নি। শিকড়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠছে না এসব শিশু-কিশোরের। বাবা-মায়ের ব্যস্ততা, সন্তানদের প্রতি উদাসীনতা কিংবা তাদের অনৈতিক উপায়ে অর্জিত অর্থ এই শিশু-কিশোরদের এ পথে নামতে সাহায্য করেছে। এর সঙ্গে সমাজের অবক্ষয়, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের লালন করা এ পরিস্থিতিতে ঘি ঢেলেছে। পৃথিবীর অনেক দেশে সামাজিকভাবে প্রচলিত থাকায় মদ্যপান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সমকামিতা, বিবাহপূর্ব সন্তান লাভ প্রভৃতি স্বাভাবিক মনে করা হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে এসব খুবই নিন্দিত ও গর্হিত কাজ। উঠতি বয়সের তরুণরা অবাধ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খবরাখবর, চলচ্চিত্র, সামাজিক অবস্থার বিভিন্ন দিক দেখে এসবের দিকে ঝুঁকে পড়ছে এবং আমাদের সমাজে এগুলো করে এক ধরনের ভিলেন সাজতে চায়, যার মধ্যে আলাদা এক রোমান্স খুঁজে পায় তারা। পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থানের ওপর মানুষের নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নির্ভরশীল।
মূল্যবোধ মানুষের ইচ্ছানির্ভর। আমরা নৈতিকতা আর মূল্যবোধকে এক করে সত্যিকারের নৈতিকতা থেকে দূরে সরে পাশ্চাত্যের সামাজিক মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে এক ধরনের বন্য জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ার মধ্যে সার্থকতা খুঁজছি। সম্প্রতি কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট কর্তৃক গ্লোবাল ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স ২০১৬-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তরুণদের ভবিষ্যত্ উজ্জ্বল নয়। কর্মসংস্থান ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রের সর্বত্রই আশাহীন পরিস্থিতি। এরই মধ্যে এক কোটির বেশি তরুণ কোনো কাজ বা শিক্ষার মধ্যে নেই। কাজেই অচিরেই মানবিক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নিষ্ঠুর নগরায়ণের দোর্দণ্ড প্রতাপে সবুজ চত্বর, খেলার মাঠ শুধু সামাজিক চারণক্ষেত্র থেকে নয় বরং কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পর্যন্ত হারিয়ে যেতে বসেছে। অবাধ আকাশ সংস্কৃতির করাল গ্রাসে সুস্থ বিনোদনের অস্তিত্ব আজ খুঁজে পাওয়া দায়। কাজেই শিল্পকলা, চিত্রকলা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ এবং লাইব্রেরি, শিশু, কিশোর ও তরুণসমাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার সময় এসেছে। জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা, বিভিন্ন শিশু-কিশোর সংগঠন, শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন সংস্কৃতিচর্চার নব নব দ্বার উন্মোচন করতে হবে।
রাজনীতিতে পেশিশক্তির আধিক্য, অস্ত্রবাজ ও বল্গাহীনভাবে ফেসবুক ব্যবহার, মোবাইল ফোনের আধিপত্য, ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের প্রভাব ও মা-বাবার কম নজরদারি কিশোরদের অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের এখানে বড় ভূমিকা রাখা উচিত। সেসঙ্গে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ও সামাজিক সংগঠনের ইতিবাচক ভূমিকা আমাদের কিশোরদের রক্ষা করতে পারে। দেশের গ্রামেগঞ্জে, শহরের পাড়ামহল্লায় পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য পাঠাগার গড়ে তোলা প্রয়োজন; ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে, তা না হলে তরুণদের বিপদগামিতা থেকে সরিয়ে আনা খুব কষ্টকর হবে। জীবনে একটি সত্বাক্য অনেক সময় একটি মানুষকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিতে পারে। পাবলিক প্লেসে, লাইব্রেরিতে সর্বত্রই সত্বাক্যগুলো লাগিয়ে রাখতে হবে, তাহলে সেগুলোর ওপর মানুষের নজর পড়ে অনেকের মনের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। বর্তমানে দেশে ১৬ কোটির অধিক জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক কিশোর। তারা বাস্তবে যা দেখে, তাই শেখে। পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে এখন প্রতিনিয়ত মারামারি হয়। এছাড়া টিভি সিরিয়াল, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস তো আছেই। আজ কিশোর ও কিশোরীদের মা-বাবা কিছু বলতে গেলেই তারা প্রতিক্রিয়া দেখায়। বিশেষ করে ১৩-১৬ বা ১৭ বছরের কিশোর, সে ছেলে বা মেয়ে হোক, তাদের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যায়।
বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের আচরণ পরিবর্তিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই কিশোরদের সচেতন করার জন্য মা-বাবার চেষ্টা অবিরত রাখতে হবে। গণমাধ্যমে যদি কিশোরদের সচেতন করার জন্য কোনো প্রামাণ্যচিত্র বা নাটকের মতো চমত্কার করে প্রোগ্রাম চালু করতে পারে, তাহলে খুব ভালো হয়। তারা তখন বিদেশী চ্যানেলে কম ঝুঁকবে। কিশোর অপরাধ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এখনো যদি তাদের ব্যাপারে আমরা যথার্থ পদক্ষেপ না নিই, ভবিষ্যতে আমাদের বড় ধরনের হুমকি মোকাবেলা করতে হবে।
অভিভাবকদের উদাসীনতাও এজন্য কম দায়ী নয়। অতিমাত্রায় আদর-স্নেহ কিংবা অবজ্ঞা উভয়ই কিশোর কিশোরীদের উগ্র করে তোলে। মা-বাবার উচিত ছোটবেলায় সন্তানদের স্নেহময় পারিবারিক বন্ধনে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও নৈতিক-অনৈতিক— সব বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেয়ার। এছাড়া কিশোরদের গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য এলাকাভিত্তিক বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। লাইব্রেরি, শরীরচর্চা, স্কাউটিং ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ও সচেতন ভূমিকা থাকতে হবে। তাদের ভূমিকা প্রায় সব সময়ই থাকে প্রশ্নবোধক।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধই কিশোর অপরাধ। চুরি, খুন, নারী নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপ, ইভটিজিংসহ নানা অপরাধে কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে। বিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশ, ভালো বন্ধুর সাহচর্য একটি শিশু বা কিশোরকে ভালোভাবে বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে। এগুলো আমরা সবার জন্য নিশ্চিত করতে পারছি না। আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে দরিদ্র। সাধ বা ইচ্ছা অপূর্ণ থাকার কারণে হতাশা থেকে অনেক তরুণ অপরাধ করে বসে। পারিবারিক সম্পর্কের সমস্যা থেকেও ছোটরা অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। আমরা কিশোরদের ঠিকমতো যত্ন করি না। ঠিকমতো যত্ন মানে তার জন্য যা দরকার, তা বুঝে তার প্রতি আচরণ করা। আর এই ঠিকমতো যত্ন না নেয়ার কারণে অনেক পরিবার থেকে তারা অবহেলার শিকার হয়। তাদের এই অবহেলার সুযোগ নিয়ে কিশোরদের মনের গোপন ইচ্ছাকে উসকে দেয় সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা কিশোরদের দিয়ে মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করায়। পরে আইনের আওতায় এসব অপরাধী ধরা পড়লে কিশোর বলে তাদের সাজা কম হয়। আর মূল অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যায়। এভাবে অপরাধের পরিধি বাড়তে থাকে।
পরিবার বিশেষ করে, মা-বাবার সামাজিক ও রাষ্ট্রের সচেতনতা কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করতে হবে ও নৈতিকতা শিক্ষার চর্চা করতে হবে। প্রকৃত জ্ঞানের চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৫ সালের এডুকেশন ওয়াচের প্রতিবেদন, ৮৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার নেই। ৪৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় না। ৭০ শতাংশ বিদ্যালয়ে হয় না স্কাউটিং। অনেকের বিপথে যাওয়ার যাত্রা এখান থেকেই শুরু। বর্তমান সরকার স্কাউটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তবে কীভাবে সব শিক্ষালয়ে এটি নিশ্চিত করা যায়, তার সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে। কিশোরদের মধ্যে মুক্ত স্বাধীন শৈশব ফিরিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত লেখাপড়ার চাপ কমাতে হবে। মুক্ত পরিবেশে ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, ব্যাডমিন্টন, মোরগ লড়াইসহ সব ধরনের খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। ভয়ের শাসনের দাপট পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্রসফায়ার, গুম, হত্যা ও নির্যাতনের রাষ্ট্রীয় চর্চারই নকল করে সন্ত্রাসীরা।
কিশোরদের অপরাধ প্রবণতা রোধ করতে হলে তাদের স্নেহ ভালোবাসার ডোরে বেঁধে রাখতে হবে। তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। বিশেষ করে তাদের বয়ঃসন্ধিকালে ভুল পথে যাওয়া ঠেকাতে হবে। কিশোরদের অধঃপতন না ঠেকাতে পারলে বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে এগোবে। ভালো শিক্ষক, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে অল্প বয়সীরা কোথায় ভালো হওয়ার শিক্ষা পাবে, নৈতিকতার শিক্ষা পাবে, দেশ ও মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা পাবে? আমরা জানি ভিক্টোরিয়ান যুগের শিক্ষা দর্শনে ‘Spare the rod spoil the child’ নীতির প্রচলন ছিল। তখন মনে করা হতো কঠোর অনুশাসনের মধ্যে না রাখলে শিশু-কিশোররা পথভ্রষ্ট হয়, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয় এবং ভালো করে পাঠ আত্মস্থ করতে পারে না।
ইংল্যান্ডের গ্রামার স্কুলগুলোয় এ ধরনের অনুশাসনের প্রচলন ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে শিক্ষা সম্পর্কে এ ধরনের কঠোর চিন্তাভাবনা দূর হয়েছে। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষককে ‘Friend, philosopher and guide’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর পরম বন্ধু। শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করার জন্য খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং ছবির মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যকর করতে হবে। শিক্ষা নিয়ে সৃজনশীল ধ্যানধারণার কমতি নেই, তার পরও মনে হচ্ছে দিন যতই সামনে এগুচ্ছে, ততই যেন অশিক্ষা ও কুশিক্ষার একটা আবহ কীভাবে যেন বিরাজ করছে। যার ফলে নৈতিকতা হারা কিশোর বয়সী ছেলেরা  গ্যাংস্টারিজমে জড়িয়ে পড়ছে। রাজনীতি ভয়াবহ রকমের সহিংস ও প্রতিহিংসাপরায়ণ।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? অস্ত্র হাতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একে অন্যকে ধাওয়া করছে। এগুলোর প্রভাব পড়ছে আমাদের কিশোরদের ওপর। একটি শিশুর বিকাশের সূতিকাগার হচ্ছে তার পরিবার। পরিবারে মা-বাবার সঠিক নির্দেশনা পেলে একটি শিশু ছোট থেকেই ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। আর পরিবারের মা-বাবা যদি শিশুর বিকাশকালে তার আবেগ, মন, আচরণ সম্পর্কে অপরিপক্ব থাকেন, তাহলে সেই পরিবারে শিশুর বিপথগামিতার আশঙ্কা থাকে বেশি। এছাড়া মা-বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের অসদাচরণ, মিথ্যাচার, দুর্নীতিপরায়ণতা, ভারসাম্যহীন ব্যবহার শিশু-কিশোরকে বিপথগামী করে তোলে। কাজেই পরিবার থেকেই শিশু-কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান শুরু করতে হবে বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে আর সেজন্য পরিবারের সদস্যদের সর্বত্রই নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করতে হবে।