কবিতা
কে ভেবেছে ?
জসিম মেহবুব
কোথায় গেলো খোকনসোনা ?
দস্যি গেলো কই ?
সারাদুপুর ঠা-ঠা রোদে
করেছে টইটই।
সকাল-দুপুর দস্যিপনার
একটুও নেই থামা,
ষাট মিনিটে সতের বার
সিঁড়ি বেয়ে নামা।
সারাটা ঘর শূন্য খাঁ খাঁ
খাবার আছে পড়ে,
আম্মু বলেন- পাজি ছেলে
আসুক এবার ঘরে।
আব্বু সোজা ছাদে ওঠেন
পান যদি তার দেখা,
দেখেন- খোকা লাঠি হাতে
কাঁদছে বসে একা।
কান্না চেপে জানাল সে-
পারতে এলাম চাঁদ,
কে ভেবেছে এই বাড়িটার
এত্ত নিচু ছাদ ?
আজ শ্রাবণে রবীন্দ্রনাথ
ইকবাল বাবুল
বন্ধু আমার,সুহৃদ আমার;কে বলে যে পর সে ?
আমিই জানি আমায় টানে কোন সে অভিকর্ষে
যায় দিয়ে সে সাহস আমায় যায় দিয়ে সে প্রেরণা
নিত্য বলে যাও লিখে, ওই হাতের কলম ছেড়ো না
কে আছে তাই মূর্খ অমন তাঁর কথা না ভাববে ?
মুগ্ধ আমি তাঁর গানে আর নিজকে জড়াই কাব্যে
লিখতে আমি তাঁকেই ভাবি,কী যাদু তাঁর চেহারায়
কষ্ট কেমন সেজন বোঝে এমন আপন যে হারায়
সত্যি সে এক সুহৃদ আমার বন্ধু পরম আত্মার
লেখার সময় আমার হাতে আলতো রাখে হাত তাঁর
যদিও আমি এসব ভাবি বাস্তবেতো নাই সে
অনেক ফুলেল শ্রদ্ধা তাঁকে আজ শ্রাবণের বাইশে ।
মুক্তিনায়ক শুধু একজনই
ফারুক নেওয়াজ
যখন মুজিব মুজিব হয়নি; টুঙ্গিপাড়ার খোকা…
তখনই সে বোঝে বেনীয়া ব্রিটিশ জাতিকে দিচ্ছে ধোঁকা।
গাঁয়ের তরুণ কিশোর যুবক ধর্ম নির্বিশেষে…
‘মিয়াভাই’ বলে তার আহ্বানে দাঁড়ালো পেছনে এসে।
বিদ্যালয়ের ছাদ চুঁয়ে পানি চুই চুই করে ঝরে…
খোকাই প্রথম মন্ত্রীর কাছে সারানোর দাবি করে।
দিনে-দিনে খোকা আরো বড় হয়ে সামনে এগিয়ে যায়;
কলকাতা গিয়ে কলেজে ঢুকেই নেতার আসন পায়।
সম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে খোকা জীবন তুচ্ছ করে…
বিপদাপন্ন নগরবাসীকে পৌঁছিয়ে দেয় ঘরে।
সেই খোকা এই শেখ মুজিবুর; আটচল্লিশ সালে
বুঝে গেল দেশ আবার জড়ালো পাকিস্তানের জালে।
ছাত্র মুজিব পড়েন ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে,
প্রতিবাদী হন বঞ্চিত যতো কর্মচারীর হয়ে।
বহিষ্কৃত হলেন তবুও মুচলেকা দেন নাই…
সংকটকালে মুজিবুর ছাড়া আর কাকে বলো পাই?
সেই থেকে হলো পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই শুরু;
মুজিবই ভরসা; বাকিদের বুক কেঁপেছিল দুরুদুরু।
ভাষার প্রশ্নে জিন্নার প্রতি ঘিন্না জানান তিনি,
শোষকের বুকে তখনই বেজেছে শঙ্কার রিনিঝিনি।
তখনই তাদের লক্ষ্য মুজিব… মুজিবেই যতো ভয়…
সেই ভেবে তাঁকে কারাগারে নিলো; তরপরও সংশয়।
কারাগারে থেকে তাঁর নির্দেশে সংগ্রাম চলে দেশে,
প্রকৃত নেতার আসনে বসালো জাতি তাকে ভালোবেসে।
ভাষার লড়াইয়ে শেখ মুজিবুর, বাষট্টিতেও তিনি
ছেষট্টিতেই ছয় দফা পেয়ে দেশ হলো সাহসিনী।
ঊনসত্তরে মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু সবার…
সত্তরে আর বাকি রইলো না সর্বশ্রেষ্ঠ হবার।
দুঃখী জাতির দুঃখ ঘোচাতে, জাগাতে স্বপ্ন চোখে…
বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কেউ ছিল কি বঙ্গলোকে?
এই মুজিবুর সেই মুজিবুর… খোকা সে টুঙ্গিপাড়ার
এই মুজিবুর আলোর দিশারী পরাধীন পথহারার।
এই মুজিবুর মিছিলে মঞ্চে রাজপথে সারাদেশে…
ফাঁসির কাষ্ঠ দেখেও হেসেছে দেশটাকে ভালোবেসে।
জেলেই কেটেছে চৌদ্দ বছর বাকিটা জীবন পথে
বন্দী জাতিকে স্বাধীনতা দিতে চেপেছে মৃত্যুরথে।
এই মুজিবুরই সাত মার্চের জাগ্রত জনতার…
এই মুজিবুরই মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ঘোষণার।
আর কেউ নয়… শুধু তাঁর ডাকে, শুধু তাঁর নির্দেশে…
বাঙালি লড়েছে, জীবন দিয়েছে, ফিরেছে বীরের বেশে।
যোদ্ধা বাঙালি ‘জয়-জয়-জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে…
শ্লোগান তুলেছে বিজয় আহমে ভয়াল রণস্থলে।
আজ কোন বোকা, কোন সে আঁতেল, কোন দালালের ভাই…
বলে সে, একক নেতৃত্বেই স্বাধীনতা আসে নাই।
শোনো পাঁতিরাম… যার ডাকে জাতি পণ করে লড়বার;
সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা সেইজনই… একক সত্তা তাঁর।
তারই ডাকে শুধু প্রাণ বাজি রেখে জাতি আনে স্বাধীনতা…
নেতৃত্বের ইতিহাসে শুধু লেখা থাকে তারই কথা।
বাঙালি জাতির হাজার যুগের স্বপ্নের ইতিহাসে;
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই নামই শুধু আসে।
এই অফিসের হিরো
জুলফিকার শাহাদাৎ
নিজের বলে কিছুই তো নেই, পরের গোলাম আমি
তার কথাতেই উঠি বসি, তার কথাতেই নামি
তার কথাতেই হাঁটা চলা, তার কথাতেই ছুটি
একটু ওদিক করতে যাবো? নেই তো মাথা দুটি।
তার ওখানে চাকরি করি, তার বেতনে ভাত
তার আদালত ধার ধারে না কোনই অজুহাত
তার হাসিতে হাসতে হবে,তার বিষাদে দুখি
কষ্ট পেলেও বলতে হবে, আ্মরা পরম সুখী।
তার কথাতে অফিস গরম,তার কথাতে কোল্ড
তার কথাতেই কেউবা হিটার,তার কথাতেই বোল্ড
তার সুবিধা ইচ্ছেমত, আর বাকিদের জিরো
ভিলেন হয়েও একাই তিনিএই অফিসে হিরো!