‘উজ্জীবন’ দেখাবে নতুন পথের দিশা

কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ স্বপ্ন দেখার সাহস আর বুকের মাঝে আগলে রাখা একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ‘ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ’-এর শিক্ষার্থী মীর ফারহান মোরশেদ যাত্রা শুরু করে ‘উজ্জীবন’ নামে একটি ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং কমিউনিটি সংস্থার। মায়ের ক্রমাগত অনুপ্রেরণা, সাহস আর ভালোবাসা পেয়েছেন ফারহান।

ভালো কিছু করার সৎসাহসের পেছনে অবদান রেখেছিলেন ‘ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ’-র প্রিন্সিপালও। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কার্যক্রমকে তিনি প্রাধান্য দেন বরাবরই। নিজ উদ্যোগে কিছু করার জন্য উৎসাহ হতে শুরু করে এর প্রতি পদক্ষেপে বাস্তবজ্ঞান ও অভিজ্ঞতার শিক্ষা দিতেও সর্বদা সচেষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এক শব্দের উজ্জীবন নামটির ঠিক নিচেই যে লেখাটি চোখে পরে তা হলো ‘Target Every Possibility’।

আমরা প্রত্যেকেই জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এসে স্বপ্ন দেখি – কিছু করার, কিছু হওয়ার কিংবা কোনো এক লক্ষ্যে পৌঁছানোর। আর তা বাস্তবায়নের প্রত্যেকটি ধাপই মূলত একেকটি নতুন সম্ভাবনা। ঠিক এমনই বিশ্বাস নিয়ে উজ্জীবনের পথচলা- যেখানে তারা প্রত্যেকটি মানুষকে সম্ভাবনা থেকে সুযোগের দিকে ঠেলে দিতে কাজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, বিশাল জনসংখ্যাকে একইসাথে এদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ও সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করেন ফারহান। ২০১৯ সালের এক রিপোর্ট অনুসারে, এদেশে প্রতিবছর অগণিত শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন কিন্তু কর্মসংস্থান সে তুলনায় অপ্রতুল। কিন্তু উজ্জীবন এর ইতিবাচক দিকটিকেই প্রাধান্য দিয়েছিল আর তাই এই দুর্বলতাকে কিভাবে সবলতা হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেটাই তাদের ভাবনা।

আমাদের দেশের শিক্ষাখাতে ক্রমাগত বেশ অগ্রগতি হলেও বিভিন্নরকম কারনেই তরুণদের মাঝে ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়ে ওঠেনা। পাশাপাশি তাদেরকে স্কিল ডেভলপমেন্ট, নেটওয়ার্কিং কিংবা অন্যান্য সফট স্কিলগুলো নিয়েও আগ্রহী করে তোলার জন্য সচেতনভাবে নেয়া হয়না কোনো পদক্ষেপ। কিন্তু পেশাগতজীবনে প্রবেশের পূর্বে এর গুরুত্ব সকলেই উপলব্ধি করে যা সময় ও সুযোগের অভাবে শেষ মুহূর্তে এসে চর্চা করা সম্ভব হয়না। তাই তরুণদের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিকগুলো জানানো, ভবিষ্যতের সঠিক সিদ্ধান্তে সহায়তা, স্কিল ডেভলপমেন্ট আর দিনশেষে একটি শিক্ষিত ও স্কিলড কমিউনিটি গড়ে তোলার লক্ষ্য উজ্জীবনের।

এই প্রচেষ্টার দেখা মেলে তাদের প্রথম ইভেন্ট ‘The Prowess Blaze’ -এই। সম্পূর্ণ ভিন্ন চিন্তাধারার এই অনলাইন ইভেন্টে মাত্র ৬টি অনন্য সেগমেন্ট ও ওয়েবিনারের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম পেশা ও একইসাথে কর্মজীবনের ব্যাবহারিক বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছিল।

প্রথম ইভেন্টের পর এবার দ্বিতীয় ইভেন্টেও এক অন্যরকম চিন্তাধারার দেখা মিলবে। UN কর্তৃক নির্ধারিত SDG (Sustainable Development Goals)  লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখা ছিল উজ্জীবনের অন্যতম লক্ষ্যগুলোর একটি। সমগ্র বিশ্ব যখন ঝউএ-র লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ছুটছে, তখন আমরা সকলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পারি- এমন চিন্তা থেকেই এবারের ইভেন্ট The International Proficient’s Arena – a contest to acknowledge SDGs & indulging potentials ।

ইভেন্টেটির মূল লক্ষ্য অধিক মানুষের কাছে SDG-র ধারনা পৌঁছে দেয়া। কোনোরকম রেজিষ্ট্রেশন ফি ছাড়াই প্রতিযোগীরা যেকোনো রকম স্কিলড কন্টেন্ট SDG-র ১৭টি লক্ষ্যের যেকোনোটির সাথে মিলিয়ে নির্দিষ্ট হ্যাশট্যাগ দিয়ে গ্রুপে পোস্ট করলেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আবার SDG-র সাথে যুক্ত না করেও অংশ নেয়া যাবে জেনারেল ক্যাটাগরিতে।

শুধুমাত্র অনলাইন নয়, ইভেন্টের একটি অংশ হবে অফলাইনেও। সারাদিনব্যাপী আয়োজিত এ সেমিনারে স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ, সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীসহ অংশ নিবেন অনেকেই। চলমান ইভেন্টটিতে শুধু দেশ থেকেই নয়, সমগ্র বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত হতে প্রতিযোগী ও ক্যাম্পাস-রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে যুক্ত হতে পারবে যে কেউ। তাদের এই উদ্যোগে ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছে কিশোর বাংলা।

উজ্জীবন, প্রত্যেকটি মানুষকে উজ্জীবিত করার ইছা নিয়ে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে অর্থাৎ এবছর ১৪ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে। একদিকে যেমন নিজের সবটুকু উজাড় করে স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পেছনে ক্রমাগত ছুটে চলেছেন এর প্রতিষ্ঠাতা ফারহান, ঠিক তেমনি তার পাশে তার শক্তি হয়ে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করছেন এক্সিকিউটিভ প্যানেলের সদস্যরা। যাদের হাত ধরে উজ্জীবনের এতদূর পথচলা তারা হলেন – শ্রাবণ, বাঁশরী, পৃথ্বী, করিম, সামানিয়া, নাফিসা, সালসাবিল, ফাহাদ, আসিফ, আওসাফ, লাবিব, হিমেল, তাসিন, সাফকাত, সিফাউল, রুদ্র, আনিসা, আয়েশা, তাহরিমা, এশা, আদ্রিব, তানজিম, বাসিত, নাওয়ারসহ আরও অনেকে।

হয়ত উজ্জীবন একা নয়, তবে তার থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে উজ্জীবিত হবে আরো অনেকে, সকলের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় একদিন গড়ে উঠবে একটি উজ্জীবিত বাংলাদেশ যেখানে প্রত্যকটি সম্ভাবনার সাথে খুলবে সুযোগের এক নতুন দুয়ার।

লেখকঃ রেজাউর রহমান সাইম