অত্যাধুনিক সাজে শিশুদের কাছে ফিরছে শিশুপার্ক

কিশোর বাংলা প্রতিবেদনঃ রাজধানী ঢাকার শিশু-কিশোরদের সরকারি ও বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হওয়ায় ধনী-গরিব সবার কাছে প্রিয় শাহবাগের ঐতিহাসিক শিশুপার্ক।

শিশুদের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ শিশুপার্কটি দীর্ঘ ৩৯ বছর পর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সরকারি এই বিনোদন কেন্দ্রটির সবগুলো রাইডই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। দীর্ঘ ২৯ বছর আগে পুরনো রাইডগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবুও এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চড়তো শিশুরা। বর্তমানে পার্কটি শিশুদের বিনোদনের উপযোগী করে তুলতে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।

আধুনিকায়নের পাশাপাশি বাড়বে এর আয়তনও। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী একবছরের জন্য বন্ধ থাকবে শিশুপার্কটি। তবে শিশুপার্কটির বন্ধ হওয়ার খবর না জেনে অনেক অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে পার্কে এসে ফিরে যাচ্ছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

রাজধানীর উত্তরা থেকে শিশু সন্তানকে নিয়ে আসা হাফিজউদ্দিন বলেন, কতোদূর থেকে যানজট ঠেলে ছেলেকে নিয়ে এসে দেখি পার্ক বন্ধ। এখন ফিরে যেতে হচ্ছে। পার্কটি বন্ধ হওয়ার খবর ভালো করে প্রচার করা উচিত ছিল। আমাদের মতো অনেকে অভিভাবক তাদের শিশু সন্তান নিয়ে এসে বিপাকে পড়ছেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, নোটিস দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

শিশুপার্কের দুই প্রবেশপথে নোটিস টানানো আছে। হয়তো অনেকের চোখে পড়েনি। সরেজমিনে দেখা যায়, পার্কের ভেতরে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। বড় বড় বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হচ্ছে রাইডগুলো। ড্রেজিং মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের (তৃতীয় প্রকল্প) অধীনে ৫০০টি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং, দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হাঁটার পথ, আন্ডারপাস, মসজিদ ও অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। মূল প্রকল্প মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত অধিদফতর এবং শিশুপার্কের আধুনিকায়নের বাস্তবায়ন করবে ডিএসসিসি।

এজন্য সংস্থাটিকে মূল বাজেট থেকে ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা থেকে পার্কের একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করার জন্য কনসালটেন্সি ফি বাবদ ১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে পুরনো স্থাপনা অপসারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে। বাকি ৭২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে পার্কে নতুন ১৩টি ইকুয়েপমেন্ট ও আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিং নির্মাণে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ পর্যন্ত। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিডেট (এনডিই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক সার্কেল) আনিছুর রহমান জানান, পার্কের রাইডগুলো পুরাতন হওয়ায় সংস্কারের প্রয়োজন ছিল। এজন্য এটিকে আধুনিকায়ন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে একীভূত করতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে।

জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ১৯৭৯ সালে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নামে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।