প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা আজ থেকে শুরু

কিশোর বাংলা প্রতিবেদন : প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা-২০১৭ শুরু হচ্ছে আজ। ১৯ নভেম্বর রবিবার দেশের সাত হাজার ২৬৭টি ও বিদেশের ১২টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা। আজ রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নেবে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এবারে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পরীক্ষার্থী ২৮ লাখ ৪ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ১৫ লাখ ৪ হাজার ৫২৪ জন এবং ছাত্র ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৫ জন। মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৬৬ জন। মোট ৭ হাজার ২৭৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। গত বছরের তুলনায় এ বছর শিক্ষার্থী কমেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ২১৩ জন।
আজ শুরু হয়ে এই পরীক্ষা শেষ হবে ২৬ নভেম্বর। সময়সূচি অনুযায়ী, বেলা ১১টায় শুরু হয়ে পরীক্ষা শেষ হবে দেড়টায়। তবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরীক্ষার্থীরা বাড়তি ২০ মিনিট পাবে। ছয়টি বিষয়ে এই পরীক্ষা হবে।
পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় জাতীয়ভাবে এটি দেশের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ঘোষণা করার পরও তা বাস্তবায়ন না করে পঞ্চম শ্রেণি শেষে এই পরীক্ষা বহাল রাখা নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে সমালোচনা আছে। এই পরীক্ষাকে শিশুদের ওপর একধরনের ‘বোঝা’ বলেও অনেক অভিভাবক অভিযোগ করে আসছেন।
এবছর প্রাথমিক সমাপনীতে দুই হাজার ৯৫৩ জন ও ইবতেদায়ীতে ৩৭৯ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। যাদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেওয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। পরীক্ষার দিন উপজেলা থেকে কেন্দ্র সচিবের কাছে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেয়া হবে। দুর্গম এলাকায় ২০৪টি কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় পরীক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য ‘ভিজিল্যান্স টিম’ গঠন করা হয়েছে।
পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের এক অফিস আদেশে জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, কেন্দ্র সচিব কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনে অফিস কক্ষে সীমিত ব্যবহারের লক্ষ্যে মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরীক্ষা কক্ষে বিতরণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি শেষে উপজেলা বা পৌরসভা বা থানা পর্যায়ে সবার জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সরকার ২০০৯ সালে অনেকটা হঠাৎ করেই জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। এটা এখন স্থায়ী হয়ে গেছে।
কিন্তু এই পরীক্ষা নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। ২০১৫ সালে বেসরকারি সংস্থার মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেশের ৮৬ দশমিক ৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং করতে হয়েছে। আর ৭৮ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে কোচিং ছিল বাধ্যতামূলক। পাসের হার বাড়াতে খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়ম হচ্ছে। পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করে লেখা এবং উত্তরপত্র মেলানোর জন্য শেষের ৪০ থেকে ৬০ মিনিট অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট পড়ার নির্ভরশীলতা বাড়ছে, পাঠ্যবইকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে গাইডবই। শিশুরা শেখার আনন্দ পেতে এবং সৃজনশীল হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 
প্রাথমিক সমাপনীর সূচি
১৯ নভেম্বর ইংরেজি, ২০ নভেম্বর বাংলা, ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২২ নভেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২৩ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ২৬ নভেম্বর গণিত।
ইবতেদায়ী সমাপনীর সূচি
১৯ নভেম্বর ইংরেজি, ২০ নভেম্বর বাংলা, ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং বিজ্ঞান, ২২ নভেম্বর আরবি, ২৩ নভেম্বর কুরআন ও তাজবিদ এবং ২৬ নভেম্বর গণিত।